গ্রীন টি এর সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা

গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানেন কি? নিয়মিত গ্রীন টি খাওয়া মানব দেহের জন্য রয়েছে অতুলনীয় স্বাস্থ্য উপকারিতা। তবে গ্রীন টি খাওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। যদি এই নিয়ম উপেক্ষা করে গ্রীন টি খেতেই থাকেন তাহলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতার পরিবর্তে অপকারিতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা
গ্রীন টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় পাওয়া যায়। তবে গ্রীন টি খাওয়ার নিয়ম মাফিক খেলে অপকারিতা যে উপকারিতা বেশি। গ্রীন টি ছাড়াও মানবদেহের জন্য গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা ব্যাপক। আজকের পোস্টের মাধ্যমে গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

প্রিয় বন্ধুরা, আজকের মূল আলোচ্য বিষয় গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং গ্রীন টি সম্পর্কিত সকল বিষয়াদি।

গ্রিন টি এর পুষ্টি উপাদান

গ্রিন টি তে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ও উপকারিতার সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। গ্রিন টি এর পুষ্টি উপাদান গুলো হল: ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন বি ৫, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ভিটামিন এইচ, সেলেনিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, মেঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যাফেইন ইত্যাদি।

গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

গ্রীন টি যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকার ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য অপকার। গ্রীন টি খাওয়ার পূর্বে নিয়ম জেনে খাওয়া উত্তম। তা না হলে অপকারিতা বেশি হয় সম্ভাবনা থেকে যায়। গ্রীন টি এর মত খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ব্যাপক পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

গ্রীন টি এর উপকারিতা

গ্রীন টি শরীরের পর্যাপ্ত শক্তি বা এনার্জি এমনকি স্ট্যামিনা ধরে রাখতে সহায়তা করে।

সবুজ চা অথবা গ্রীন টি পান করলে হজম কি বৃদ্ধি পায় এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।

শরীরের পানির ঘাটতি ও পানির শূন্যতা প্রতিরোধে গ্রীন টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ্রীন টি এর চা এর লিকার খাওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে এবং নারীকে শক্ত ও মজবুত করে।

ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে গ্রীন টি এর পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ্রীন টি নিয়মিত খাওয়ার খেলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম অথবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে।

গ্রীন টি ন্যাচারাল টোনার যা ব্যবহারে চোখের নিচে থাকা কালো দাগ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

গ্রীন টি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

গ্রীন টি পান করলে ধমনী শিথিল থাকে এবং দেহের রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে।

ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য গ্রীন টি খুবই উপকারী। গ্রীন টি নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখা যায়।

গ্রীন টির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে থাকা কোলাজেন উজ্জীবিত করতে সাহায্য করে যা ত্বকের টানটান ভাব দূর করে এবং ত্বকের বাধ্যকের ছাপ কমায়। এমনকি গ্রীন টি খেলে বাধ্য করে এড়িয়ে চলে এবং আয়ু বৃদ্ধি করে।

গ্রীন টি নিয়মিত পান করার ফলে রোদে পোড়া ত্বক ভালো করে, ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

গ্রীন টি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায়। যা খেলে একটি যাদুকারি পানীয় হিসেবে কাজ করে।

গ্রীন টি দেহের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং ফ্যাট বার্নের মাধ্যমে দেহের অস্বাভাবিক ওজন কমাতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এবং উন্নতি করতে সাহায্য করে গ্রীন টি।

গ্রীন টি কিডনি রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। যেসব রোগী কিডনি রোগে ভোগেন তারা নিয়মিত গ্রীন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন।

গ্রীন টিতে থাকা নিন নামক অ্যামিনো এসিড হতাশা, দুশ্চিন্তা ও অবসাদ কমায়।

হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় গ্রীন টি তবে নিয়মিত পরিমাণ অনুযায়ী খেতে হবে।

গ্রিন টি এর অপকারিতা

গ্রীন টি এর উপকারিতা থাকলেও যদি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে খাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রিন টি এর এমন কিছু বিষয় আছে যা মেনে না খেলে উপকারিতা নয়, বরং এর জন্য খুবই ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলুন জেনে নেই গ্রিন টি এর অপকারিতা সম্পর্কে।

গ্রিন টি বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। যদি দৈনিক 200 মিলির বেশি পরিমাণে গ্রিন টি খাওয়া হয় তাহলে বদ হজম, হজম যন্ত্র সমস্যা এমনকি অনিন্দ্রা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উক্ত সমস্যাগুলো আরো বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যদি আপনাদের রাতের বেলা গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে। ক্যাফিন শুধুমাত্র কফিতে আছে তা নয় বরং প্রচুর পরিমাণে গ্রিন টিতেও ক্যাফিন পাওয়া যায়। সুতরাং রাতে গ্রিন টি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উত্তম।

গ্রিন টি খালি পেটে অথবা কোন খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই খাওয়া ঠিক নয়। যদি এমন অবস্থায় গ্রিন টি খাওয়া হয় তাহলে পেটে গ্রিন টির ট্যানিন এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এটি দেহের উপকারিতার হিতে বিপরীত ডেকে আনে।

গ্রিন টি এর সাথে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ গ্রিন টি এর সাথে পশুদের উপাদান গুলো একত্রে মিশে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে এমনকি ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায়।

খাবারে থাকা প্রোটিন হজমের পূর্বে গ্রীন গ্রিন টি খেলে খাবার হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে যা হজম সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে, দুপুর বারোটার সময় রাতের খাবার খাওয়ার এক ঘন্টার পরে অথবা ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে গ্রীন টি খাওয়া ঠিক নয়।

তুই একটু গরম গ্রিন টি খেলে জিব্বা ও ঠোঁট পুড়ে যায় এমনকি পাকস্থলীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে যদি গ্রিন টি খাওয়া হয় তাহলে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

যদি দেহে আয়রন এর ঘাটতি থাকে তাহলে গ্রিন টি খাওয়া উচিত নয়।

গরম গ্রিন টি এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে গ্রিন টি এর কার্যকারিতা ও উপকারিতা কমে যায়।

চা ও কফিতে যেমন ক্যাফিন থাকে ঠিক তেমনি গ্রিনটিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন পাওয়া যায়। যা অতিরিক্ত খেলে মাথাব্যথা, আলসেমি, অনিদ্রা, উদ্বেগ ইত্যাদি হয়। এছাড়াও ক্যাফেন আয়রনের পরিমাণ কমায়।

পেপটিক আলসার এর সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিদের গ্রিন টি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উত্তম।

গ্রিন টি সাথে চিনি, গুড়া দুধ, লেবু অথবা অন্য কোন মসলা জাতীয় খাবার মিশিয়ে খাবেন না।

এক কাপ পরিমাণ গ্রিন টির কাপে কখনো দুইটি গ্রিন টির ব্যাগ মিশিয়ে খাবেন না। কেননা একটি পেটের এসিডিটি বৃদ্ধি ও হজম সমস্যা হতে পারে।

অতিরিক্ত গ্রিন টি খেলে মাথা ব্যথা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা

গ্রিন টি খাওয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। যদি দিনে এক কাপ পরিমাণ গ্রিন টি খাওয়া যায় তাহলে আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে। এতে দেহ ও মন সারাদিন সতেজ প্রফুল্ল ও সুস্থ থাকবে। এছাড়াও গ্রিন টিতে আছে আন্টি অক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড ও পলিফেনল যা খেলে ফ্লু, ও কাশি থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়: গ্রিন টি এন্টি অক্সিডেন্ট এর গুনাগুন থাকায় রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল এল ডি এল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সেই সাথে ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএল বৃদ্ধি করে এবং ধমনীর কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। গ্রিন টি এর পানি ৪৬ শতাংশ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও গ্রিন টি ত্বক ও চুলের স্বাস্থের জন্য বিশেষভাবে উপকারিতা প্রদান করে।

গ্রিন টি খাবেন না এই পদ্ধতিতে

  • গ্রিন টি এর সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়।
  • খাবার খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি খাবেন না।
  • সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাবেন না।
  • গ্রিন টি এর ব্যাগ একটি কাপে একসাথে দুইটি মেশাবেন না।
  • গ্রিন টি এবং ঔষধ একত্রে খাওয়া ঠিক না।
  • গ্রিন টি গরম অবস্থায় খাওয়া উচিত না।
  • গ্রিন টি এর সাথে চিনি, গুড়া দুধ ও অন্যান্য মসলা জাতীয় খাবার মিশিয়ে খাওয়া উচিত নয়।
  • গ্রিন টি অতিরিক্ত অর্থাৎ মাত্রার বেশি খেতে যাবেন না।
  • গ্রিন টি দুপুর ১২:০০ টায় খাওয়া সঠিক সময় নয়।
  • রাতে ঘুমানোর পূর্বে অর্থাৎ রাতের খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে গ্রিন টি না খাওয়া উত্তম।
  • গ্রিন টি ন্যাচারাল ফ্লেভার খাওয়া উত্তম।

গ্রিন টি খাওয়ার সময়

গ্রিন টি খাওয়ার সঠিক এবং উপযুক্ত সময় হচ্ছে সকালে অথবা বিকেলে হালকা নাস্তা করার পর। শরীরচর্চা করার পূর্বে গ্রিন টি পান করতে হয়। সুস্থ স্বাভাবিক থাকার জন্য দৈনিক এক কাপ পরিমাণ গ্রিন টি পান করা জরুরী। তবে এটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে খালি পেটে অথবা খাওয়ার সাথে সাথে গ্রিন টি খাওয়া যাবে না।

গ্রিন টি বানানোর নিয়ম

ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে, গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। এখন আলোচনা করা হবে গ্রিন টি বানানোর নিয়ম সম্পর্কে। গ্রিন টি সবুজ চা নামের পরিচিত। এটি স্বাস্থ্য গুণাগুণ এবং তাজা স্বাদ এর জন্য খুবই জনপ্রিয়। গ্রিন টি বানানো খুবই সহজ। যদিও গ্রিন টি বানাতে প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলে গ্রিন টি এর স্বাদ এবং গুণগতমান বজায় থাকে।

গ্রিন টি বানানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ

  • গ্রিন টি এর পাতা: গ্রিন টি তৈরিতে গুণগত মান সম্পূর্ণ তার নির্বাচন করুন। সাধারণত মা-মনি টি, এবং ফেমাস টি গোল্ড গ্রিন টিপাতা বিশুদ্ধ ও উচ্চ মানের।
  • গরম পানি: গ্রিন টি এর জন্য গরম পানি করতে একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কেটলি বা সাইজ মত হাড়ী ব্যবহার করুন।
  • চা তৈরির পাত্র: গ্রিন টি এর চা তৈরি করতে প্রয়োজনীয় কাপ অথবা টিপট নিন।
  • চা ছাকনি: গ্রিন টি এর যা থাকার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছাকনি ব্যবহার করুন।

গ্রিন টি বানানোর সঠিক নিয়ম

  • প্রথমে পানি গরম করতে হবে। তবে মনে রাখা উচিত গ্রীনটি তৈরি করার জন্য পানি ফোটানোর প্রয়োজন হয় না। গ্রিন টি তৈরি করতে ৭৫ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। যদি পানির তাপমাত্রা বেশি হয় তাহলে গ্রিন টি এর পাতা পুড়ে যেতে পারে ফলে চায়ের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
  • গ্রিন টি চা তৈরিতে প্রতিটি কাপে এক থেকে দুই চা চামচ পরিমাণ গ্রিন টিপাতা যুক্ত করুন।
  • গরম করা পানি গ্রিন টি পাতার উপর ঢেলে প্রায় দুই থেকে তিন মিনিট অপেক্ষা করুন।
  • নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করার পর পাতাযুক্ত পানি থেকে পাতা ফেলে দিন।
  • এর মাধ্যমে তাজা গ্রিন টি আপনার পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। গ্রিন টি এর গুণগত মান ও স্বাদ বৃদ্ধি করতে মধু ও লেবু যুক্ত করতে পারেন।

আসল গ্রিন টি চেনার উপায়

আসল গ্রিন টি চেনার কিছু সহজ উপায় আছে। যা আপনাকে ভালো ও গুণগত মান সম্পন্ন গ্রিন টি সঠিকভাবে চিনতে সাহায্য করবে। আসল গ্রিন টি চেনার উপায় নিচে দেওয়া হল:

আসল গ্রিন টি এর রঙ: আসল গ্রিন টি এর রং মূলত সবুজ বা হলুদ/সবুজ রঙের হয়ে থাকে। যদি গ্রিন টি এর রং ডার্ক সবুজ অথবা কালো রঙের হয় তাহলে নকল অথবা নিম্নমানের হয়ে থাকে। 

আসল গ্রিন টি এর গন্ধ: আসল গ্রিন টি এর গন্ধ সাধারণত মৃদু, তাজা, প্রাকৃতিক হয়ে থাকে। নকল ও নিম্নমানের গ্রিন টিতে কেমিক্যাল যুক্ত গন্ধ এবং এর গন্ধ খুব তীব্র হয়।

আসল গ্রিন টি এর পাতার আকার: আসল গ্রিন টি এর পাতা সাধারণত মসৃণ হয়। এর মধ্যে কোন প্রকার অস্বাভাবিক জন্য দেখা যায় না। পাতাগুলো ছোট ছোট আকারে ভেঙ্গে না গিয়েও একত্রে থাকে।

আসল গ্রিন টি এর প্যাকেজিং ও ব্র্যান্ড পরিচিতি: আসল গ্রিন টি সাধারণত পরিবেশবান্ধব ও প্রাকৃতিক প্যাকেজিং পাওয়া যায়। এছাড়াও উন্নত মানের ব্যান্ডের গ্রিন টি গুলোতে জাপান অথবা চাইনিজ লোগো, উৎপাদনের তারিখ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া থাকে। বিশ্বস্ত ও উন্নত মানের গ্রিন টি পাওয়া যায় জাপানি ও চায়না কোম্পানি থেকে। সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রিন টি ব্র্যান্ড এর নাম ড্রাগন অয়েল, চাইনিজ গান পাউডার, স্নো মাউন্টেন জিয়ান ইত্যাদি এবং কুকিচা, সেনচা, ম্যাচা ইত্যাদি জাপানের সেরা।

গ্রিন টি খাওয়ার সতর্কতা

আমেরিকান জার্নাল অব মেডিসিন এর গবেষণায়, গ্রিন টি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। যদিও গ্রিন টি পান করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে গ্রিন টি কখন খাবেন না। এই সময় গ্রিন টি খেলে বদহজম, এসিডিটি এমন কে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত পরিমাণ অনুযায়ী সর্তকতা মেনে গ্রিন টি পান করলেন ত্বকের গুণগতমান, মেটাবলিজম এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। গ্রিন টির যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায় তেমনি এর কিছু অপকারিতা পাওয়া যায়। অনেকে শারীরিকভাবে সুস্থ ও ফিট থাকতে সকালে উঠে ব্যায়াম করার পরে খালি পেটে গ্রিন টি পান করে থাকেন। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উপরে আমরা জানতে পেরেছি, গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এখন জানবো গ্রিন টি খাওয়ার সতর্কতা।

গ্রিন টি পেপটিক আলসার অথবা এসিড রিফ্লাক্স এ আক্রান্ত আছেন এমন রোগীদের খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। এসব রোগী যদি খালি পেটে গ্রিন টি খাই তাহলে তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গ্রিন টি হার্টবিট ও রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। গ্রিন টি তে রয়েছে ক্যাফেইন যা অ্যাড্রিনাল ঘুম থেকে উজ্জীবিত করে। যা এন্ড্রেনালীনের ও কর্টিসল স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে।

যদি খালি পেটে গ্রিন টি পান করা হয় তাহলে তা রক্তকে সরাসরি প্রভাবিত করে। এর কারণে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে এবং রক্তে প্রোটিন এর পরিমাণ কমে যায়। যার ফলে ধীরে ধীরে রক্তের ঘনত্ব কমতে থাকে।

রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। যদি তারা গ্রিন টি খায় তাহলে দেহের প্রয়োজনীয় আয়রনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তারপরও রক্তস্বল্পতা রোগী যদি গ্রিন টি পান করতে চায় তাহলে তা কখনোই খালি পেটে নয়।

যদি গ্রিন টি খালি পেটে খাওয়া হয় তাহলে পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গ্রিন টিতে রয়েছে ট্যানিন যা পেটের এসিডিটি বৃদ্ধি করে। যার ফলে পেটে ব্যথা ও পেটের অতিরিক্ত এসিডিটি বৃদ্ধি পায় এবং বমি হয়। এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য আরো জটিলতা আকার ধারণ করে।

গ্রিন টি পান করার পূর্বে উপরোক্ত সমস্যাগুলো বিবেচনা করে সতর্কতার সাথে করে আমাদের গ্রিন টি পান করা উচিত। তা না হলে আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা ও ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

গ্রিন টি সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর

গ্রিন টি কেন খাবেন?
গ্রিন টি দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বজুড়ে সুস্বাস্থ্যকর পানীয় প্রথম তালিকায় রয়েছে গ্রিন টি। নিয়মিত পরিমাণ অনুযায়ী গ্রিন টি খেলে শরীরের জন্য খুবই উপকারী হয়ে ওঠে।

গ্রিন টি খেলে কি হয়?
কোলেস্টেরল নিয়ে চিন্তিত ব্যাক্তিরা যদি নিয়ম মেনে গ্রিন টি খাই তাহলে কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পাবে। গ্রিন টি খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে। এমনকি হজম শক্তি উন্নতির পাশাপাশি ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ফুসফুস, ত্বকের, মুত্রাশয়ের, স্তনের, খাদ্যনালির, কোলন ইত্যাদির ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায় আবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

দিনে কয়টি গ্রিন টি খাওয়া উচিত?
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, দিনে দুই থেকে তিন কাপ পরিমাণ গ্রীন টি চা খাওয়া যায়। তবে বেশি পরিমাণে না খেয়ে কম করে খাওয়া। কেননা বেশি করে গ্রিন টি খেলে দেহের পলিফেলন বৃদ্ধি হতে পারে। একজন সুস্থ ব্যক্তির পলিফেলন দৈনিক ২৪০-৩২০ মিলিগ্রাম যথেষ্ট।

সকালে গ্রিন টি খাওয়া যাবে কি?
সকালে গ্রিন টি খাওয়া গেলেও খালি পেটে খাওয়া যাবেনা। গ্রিনটি খাওয়ার পূর্বে হালকা একটু খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে খাওয়া উচিত। হালকা খাবারের মধ্যে বিস্কুট, মুড়ি, টোস্ট, অন্যান্য শুকনা খাবার ইত্যাদি। যদি খালি পেটে অথবা কোন খাবার খাওয়ার পূর্বে গ্রিন টি খাওয়া হয় তাহলে বৃদ্ধি হতে পারে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা।

গ্রিন টি কোথায় বেশি পাওয়া যায়?
সাধারণত সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় চীনে, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, জাপান। তবে উৎকৃষ্ট মানের গ্রিন টি চাষ করা হয় জাপানে। সবচেয়ে ভালো গ্রিন টি এর মধ্যে ড্রাগন অয়েল, চাইনিজ গান পাউডার, স্নো মাউন্টেন জিয়ান ইত্যাদি অত্যন্ত সুপরিচিত এবং সবচেয়ে চাহিদা পণ্য। এছাড়াও কুকিচা, সেনচা, ম্যাচা ইত্যাদি জাপানের খুবই জনপ্রিয়।

উপসংহার - গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা

আজকের পোস্টের মূল আলোচ্য বিষয়, গ্রীন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। গ্রিন টি খাওয়ার পূর্বে আমাদের অবশ্যই এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে খাওয়া উচিত। এছাড়াও গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম, সঠিক সময় এবং সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি উক্ত বিষয় মেনে গ্রিন টি না খাওয়া হয় তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য বিভিন্নভাবে ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সুতরাং আমাদের অবশ্যই জেনে রাখা উচিত গ্রিন টি খাওয়ার সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url