সূর্যমুখী বীজের দাম কত: বীজের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
সূর্যমুখী বীজের দাম কত জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ সূর্যমুখী বীজের আছে অসাধারণ ও অতুলনীয় গুণাবলী যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যমুখী বীজের গুনাগুন ও উপকারিতা গ্রহণের জন্য সূর্যমুখী বীজ বাজার থেকে ক্রয় করতে হয়। সুতরাং ক্রয় করার পূর্বে সূর্যমুখী বীজের বর্তমান দাম কত জানা জরুরী হয়ে পরে।
এছাড়াও সূর্যমুখী বীজের তেলের গুনাগুন আমাদের অনেকের জানা থাকলেও, সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানা নেই। সূর্যমুখী বীজের আছে অতুলনীয় স্বাস্থ্য উপকারিতা ও বিভিন্ন গুণ। যা জানলে আপনারা অবাক হবেন। আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের জানাবো, সূর্যমুখী বীজের দাম কত, বীজের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।
পোষ্টের সূচিপত্রঃপ্রিয় বন্ধুরা, আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে জানবো সূর্যমুখী বীজের দাম কত, বীজের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সকল তথ্য।
সূর্যমুখী বীজের দাম কত?
সূর্যমুখী বীজ বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন দামে পাওয়া যায়। তবে সূর্যমুখী বীজের দাম কত এর কিছু সাধারণ ধারণা আপনাদের জানানোর জন্য এই পোস্টে উল্লেখ করেছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সূর্যমুখী বীজের বর্তমান দাম কত।
আরো পড়ুনঃ ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকা
১০০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজের দাম কত?
সাধারণত ১০০ গ্রাম বীজের দাম ধরা হয় প্রায় ১৩০ - ১৫০ টাকা। এটি সাধারনত ১০০ গ্রাম প্রতিটি প্যাকেট অথবা সূর্যমুখী বীজের কৌটা ধরা হয়।
২৫০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজের দাম কত?
প্রতি ২৫০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজের বিক্রেতারা দাম রাখেন প্রায় ৩০০ - ৩২৫ টাকা পর্যন্ত। তবে এর দাম নির্ভর করে নিজের গুণগত মানের উপর।
৫০০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজের দাম কত?
৫০০ গ্রাম প্যাকেট সূর্যমুখী বীজের দাম নেওয়া হয় প্রায় ৬৫০ টাকা। তবে বিক্রেতার উপর নির্ভর করে সূর্যমুখী বীজের এর দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে।
১ কেজি সূর্যমুখী বীজের দাম কত?
সূর্যমুখী বীজ বিক্রেতা আগুন প্রতি কেজি বীজের দাম নিয়ে থাকেন প্রায় ১৩০০ টাকা। তবে বীজের গুণগত মান, স্থান ও বিক্রেতার উপর নির্ভর করে সূর্যমুখী বীজের দামের কিছুটা পার্থক্য থাকে।
সূর্যমুখী বীজের ১ লিটার তেলের দাম কত?
সূর্যমুখী বীজের ১ লিটার তেলের দাম অফারে ৩৫০ টাকা হলেও এর দাম প্রতি লিটারে বিক্রি করা হয় ৪২৫ টাকায়। পরবর্তীতে সূর্যমুখী বীজের এক লিটার তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩০ টাকা প্রতি লিটারে।
সূর্যমুখী ফুলের বীজ কোথায় পাওয়া যায়?
সূর্যমুখী ফুলের বীজ ক্রয় করার পূর্বে জানা প্রয়োজন সূর্যমুখী ফুলের বীজ কোথায় পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুলের বীজ সাধারণত দেশের বিভিন্ন স্থানে, দোকানে, কৃষি অফিসে, অনলাইনে ইত্যাদি স্থানে পাওয়া যায়। এছাড়াও স্থানীয় বাজার, সুপার মার্কেট, অনলাইনে (যেমন-ই-কমার্স ওয়েবসাইট,) ইত্যাদি পাওয়া যায়। এমনকি কৃষি সরঞ্জাম ও বাগানের সাথে সম্পৃক্ত প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করে এমন দোকানে এবং যেসব দোকানে বিভিন্ন ধরনের বীজ বিক্রি করা হয় এমন দোকানগুলোতে সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যায় বা যেতে পারে।
সূর্যমুখী বীজের পুষ্টি উপাদান
সূর্যমুখী ফুল দেখতে যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি এর বীজে আছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান যা স্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী বীজের পুষ্টি উপাদান গুলো হল:
- ভিটামিন ই
- বিটা ক্যারোটিন
- এনটি এজিং প্রপার্টিজ
- ডিনামাইড
- ভিটামিন বি ৬
- ফ্যাটি এসিড
- কোলাজেন
- অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ
- ফাইটোস্টেরল
- ট্রিপটোফেন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- লিগন্যানস
- ওমেগা৬
- অ্যামিনো এসিড
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি।
সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
ইতিপূর্বে আমরা জানতে পেরেছি সূর্যমুখী বীজের দাম কত সম্পর্কে। সূর্যমুখী বীজের আছে অসংখ্য স্বাস্থ্যের উপকারিতা। যা আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজ বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা নিচে আলোচোনা করা হলো:
সূর্যমুখী বীজে পাওয়া যায় ম্যাগনেসিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তনালী গুলোকে শিথিল রাখে।
সূর্যমুখী বীজের এন্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য বহন করে যা রক্তের শর্করার মাত্রা কমা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।
খাবার দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে সূর্যমুখী বীজ।
সূর্যমুখী বীজ দ্রুত কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হাড়ের অবকাঠামো শক্তিশালী, জয়েন্ট এর সুরক্ষা, হার শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে সূর্যমুখী বীজ।
অস্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে নিয়মিত পরিমানে সূর্যমুখী বীজ গ্রহণ করুন। এই বীজ পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
সূর্যমুখী বীজে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬ যা চুল ঝরে পড়া রোধ করা। চুলকে গোড়া থেকে শক্ত ও মজবুত করে। এছাড়াও এই বীজের ওমেগা-৬ চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করেন, চুলের আদ্রতা বজায় রাখে এবং চুলকে কোমল ও প্রাণ উজ্জ্বল করে তুলে।
সূর্যমুখী বীজ মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখে। এই বীজের ট্রিপটোফেন নামের অ্যামিনো এসিড দেহের সেরোটিনটিন জাতীয় পদার্থ রিলিজ করে ঠান্ডা রাখতে এবং হতাশা ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। হলে ভয়াবহ অ্যাংজাইটির ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
ভিটামিন ই এর প্রধান উৎস সূর্যমুখী বীজ। এটি ত্বকের আদ্রতা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করে। এছাড়াও ত্বকের রেডিক্যাল, সূর্য রশি, এবং ত্বকের ড্যামেজ হওয়া থেকে মুক্তি করে।
সূর্যমুখীর বীজ বয়সের বার্ধক্য কমায়। এই বীজের এন্টি এজিং প্রপার্টিজ বয়সের বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না। এমনকি এর ভিটামিন ই ও বিটা ক্যারোটিন ত্বকের মসৃণ, কোমলতা, তারুণ্যদীপ্ততা, উজ্জলতা ধরে রাখে।
সূর্যমুখী বীজের ভিটামিন ই গ্রহণের ফলে বাতের রোগ, হাঁপানি-অ্যাজমা, ও অস্ট্রিও আর্থাইটিস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সূর্যমুখীর বীজ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এই বীজে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোস্টেরল ও লিগন্যানস এই উপাদানগুলো ক্যান্সারের কোষ তৈরিতে বাধা প্রদান করে।
এটি স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে।
সূর্যমুখী বীজ মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে ভূমিকা পালন করে এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সূর্যমুখী বীজে আছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের জ্বালাপোড়া, গ্যাস্ট্রিক আলসার, বাত-ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা, ইত্যাদি রোগ নিরাময় করে।
সূর্যমুখী বীজ দৈনিক ১/৪ কাপ পরিমান খেলে হার্টের সমস্যা দূর করে এবং হার্ট সুস্থ রাখে। এছাড়াও সূর্যমুখীর বীজ ভেজে খেতে পারেন।
সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা
সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা যেমন পাওয়া যায় তেমনি সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা রয়েছে। সূর্যমুখী বীজ যদিও সুস্বাস্থ্যকর তবে কিছু ক্ষেত্র ও ব্যক্তির বিশেষে উপকারিতার পরিবর্তে অপকারিতা হতে পারে। সূর্যমুখী বীজের অপকারিতা হলো:
- সূর্যমুখী বিয়ে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। সূর্যমুখী বীজ অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ক্যালরি ও ফ্যাট এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ফলে স্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি পায়।
- কিছু কিছু ব্যক্তিদের এলার্জির কারণ হতে পারে সূর্যমুখী বীজ। যার ফলে এলার্জির প্রতিক্রিয়া ও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ এর সাথে সূর্যমুখী বীজ গ্রহণ করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সূর্যমুখী বীজের সাথে সল্টেড ও মসলা যুক্ত করে খেলে সোডিয়াম এর মাত্রা বেশি হয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
- সূর্যমুখী বীজে ওমেগা-৬ বেশি থাকে যা বেশি পরিমাণে খেলে দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম
সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা ও এর পুষ্টিগুণ সর্বাধিক পেতে সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম মেনে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার কিছু সঠিক নিয়ম আছে যা আমাদের জানা আবশ্যক। সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম দেওয়া হল:
- সূর্যমুখীর বীজ দৈনিক 1 থেকে 2 মুঠো অথবা ২৫ থেকে ৫০ গ্রাম খাওয়া উচিত। এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি বৃদ্ধি করে।
- সূর্যমুখীর বীজ কাঁচা খেলে বেশি ভালো। অস্বাস্থ্যকর ও অতিরিক্ত তেলে বীজ ভাজলে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট হতে পারে।
- সূর্যমুখীর বীজ স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর করতে সালাদ, স্মুদি অথবা দই এর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- এছাড়াও সূর্যমুখীর বেদ স স্নাক্স হিসেবে ব্রেকিং এর সাথে ব্যবহার করতে পারেন।
- সল্টেড ও মসলাযুক্ত বীজ খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলুন।
সূর্যমুখী ফুলের বীজের বৈশিষ্ট্য
- সূর্যমুখী ফুলের বীজ সাধারণত বাংলাদেশের আবহাওয়ায় প্রতিবছর ফলানো যায়।
- যদিও শীতকালীন সময়ে বেশি পরিমাণে ফুল পাওয়া যায় এবং বর্ষাকালে গাছ মারা যেতে পারে।
- ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফুল আসে।
- সূর্যমুখীর প্রতিটি ফুলে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ বীজ পাওয়া যায়।
- সূর্যমুখীর ফুলগুলো সাইজে ও আকর্ষণীয় রঙে সকল কৃষকদের পছন্দ।
- হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী বীজগুলো অধিক মাত্রায় ফলনশীল।
- এই জাতের বীজগুলো ক্ষতিকর ভাইরাস সহনশীল।
- হাইব্রিড জাতের সূর্যমুখী গাছ অল্প জায়গাতে অনা আসে টবে বারান্দায় লাগানো যায়।
- সকল ধরনের মাটিতে সূর্যমুখী চাষ করা সম্ভব।
- সাধারণত ছয় থেকে ১৫ দিন এর মধ্যে ২০ থেকে চারা হয়।
- হাইব্রিড গুলো উচ্চ তাপমাত্রা এমনকি বৃষ্টির সহনশীল।
সূর্যমুখী বীজের ছবি
সারসংক্ষেপ
আজকের পোষ্টের মূল আলোচ্য বিষয় সূর্যমুখী বীজের দাম কত। আশা করি আপনারা সূর্যমুখী বীজের বর্তমান বাজারে দাম কত জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। এছাড়াও এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের আরো জানানো হয়েছে সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সূর্যমুখী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। উপরে উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে আরো জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url