কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন জেনে থাকা ভালো

কচুর শাক খেলে কেন গলা চুলকায় আপনি কি জানেন? না জানলে চলুন আমি আপনাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে জানাবো কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন এই নিয়ে বিস্তারিত। কেননা আজকের পোস্টটি কচুর শাক খেলে গলা চুলকানোর কারন নিয়ে সাজানো হয়েছে।
কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন
কচু শাক খেলে কেন গলা চুলকায় তা অনেকের অজানা। কচু শাক খাওয়ার পরে গলা চুলকানোর কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ রয়েছে। তবে কচুর শাক এর অক্সালেট ক্রিস্টাল এর উপস্থিতির কারণে গলা চুলকায়। আজকের পোস্টে আমরা জানতে পারবো, কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

পোষ্ট সূচিপত্র-কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন জেনে থাকা ভালোঃপ্রিয় বন্ধুরা আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে জানবো, কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন এবং গলা চুলকানোর প্রতিকার সম্পর্কে সকল তথ্য।

কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন?

কচু শাক খাওয়ার কারণে গলা চুলকায় যার প্রধান কারণ হচ্ছে কচুর শাক এর ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল এর উপস্থিতি। কচু শাকের এই উপাদান খেলে মুখ এবং গলার সংবেদনশীল শিশুগুলোতে প্রবেশ করে যা সুই ফুটানো অথবা গলায় চুলকানির কারণ হয়ে থাকে।

ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল প্রাকৃতিকভাবে তৈরি একটি পদার্থ যা কচু শাক সহ অন্যান্য উদ্ভিদে পাওয়া যায়। এই পদার্থগুলো সাধারণত উদ্ভিদের সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। এটি সাধারণত তৃণভোজী প্রাণীদের পাতা খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে।
যদিও যদিও ক্যালসিয়াম অক্সলেট ক্রিস্টাল পদার্থ উদ্ভিদের জন্য উপকারী, তবে মানুষ এর জন্য বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে।

ক্যালসিয়াম অক্সলেট ক্রিস্টাল পদার্থ গুলো যখন আমাদের মুখ বা গলার সংস্পর্শে আসে তখন তা চুলকানির সৃষ্টি করে। তবে গলার চুলকানির তীব্রতা ব্যাক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন।

তবে কচু শাকের খাওয়ার পরিমাণ এবং রান্না করার উপর নির্ভর করে চুলকানি তীব্রতা কিছুটা অথবা পুরোপুরি দূর করা সম্ভব। রান্না করার পূর্বে যদি কিছু সময় ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে লেবু অথবা টক দিয়ে রান্না করা হয় তাহলে কচু শাক খেলে গলার চুলকানি দূর হয়।

কচু শাক কিভাবে রান্না করলে গলা চুলকাবে না

কচু শাক যদি রান্না করা হয় তাহলে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল এর মাত্রা পুরোপুরি দূর করা না গেলেও অনেকটা কমে যায়, ফলে গলা কম চুলকায়। আগুনের উত্তপ্ত তাপ অক্সালেট ক্রিস্টাল এর স্পটিক গুলোকে ভেঙ্গে ফেলে, ফলে গলা চুলকায় এমন তীব্রতা দূর করে।

যাই হোক, কচু শাক এর গলা চুলকায় এমন অস্বস্তি কমাতে সঠিকভাবে প্রস্তুত এবং রান্না করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কচু শাকের গলার চুলকানি কমানোর রান্না করার কিছু উপায় দেওয়া হল:

কচু শাকের পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পরিমাণ মতো পানিতে সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ হয়ে গেলে অতিরিক্ত পানি ফেলে দিন। এতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল দূর করতে সাহায্য করবে।

কচু শাক খাওয়ার পূর্বে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করা উচিত। এছাড়াও কচু শাকের চুলকানি অপসারণে পাতাগুলো ফুটানোর সময় এক চিমটি পরিমাণ বেকিং সোডা অথবা খাবার সোডা ব্যবহার করুন।

কচু শাক এর চুলকানি দূর করতে আরেকটি উপায় হচ্ছে গাজন পদ্ধতি। গাজন পদ্ধতিতে কচু শাক রান্না করলে সহজে চুলকানি দূর হয়। এমনকি কচু শাক খেতে আরো সুস্বাদু লাগে।

কচুু শাকে যদি নারিকেল, দুধ, তেতুল অথবা লেবুর রস ব্যবহার করে রান্না করা হয় তাহলে কচু শাক খেলে গলা অনেকটা কম চুলকায়। উপরোক্ত উপাদানগুলো কচুশাকে ব্যবহারে অক্সালেট দূর করে এবং কচু শাকের স্বাদ বহুগুণ বৃদ্ধি করে।

বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বাসিন্দারা অক্সালেট সমৃদ্ধ সবজি রান্না করার সময় এটি দূর করতে প্রায়শই নারিকেল দুধ ব্যবহার করে থাকেন।

কচুর শাকের চুলকানি দূর করার উপায়

কচু শাকের চুলকানি সম্পূর্ণরূপে দূর করা না গেলেও অধিকাংশই অপসারণ করা সম্ভব। কচু শাকের চুলকানি দূর করার কিছু উল্লেখযোগ্য উপায় হল:
  • কচু শাক ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া: কচু শাক যদি ভালোভাবে রান্না করা হয় তাহলে চুলকানি ও অন্যান্য বিষাক্ত উপাদান গুলো কমে যায়। কচু শাক খেলে গলা চুলকায় এড়িয়ে চলতে ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • লেবুর রস: কচু শাক রান্নার সময় লেবু অথবা লেবুর রস ব্যবহার করলে গলা কম চুলকায়। এমনকি কচু শাক খাওয়ার সময় লেবুর রস সহকারে খেলে ভালো কাজ করে।
  • দুধ: কচু শাক খাওয়ার পরে দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। দুধ খাওয়ার ফলে অনেকটাই গলা চুলকানি কমানো সম্ভব।
  • কোমল পানি: কচু শাকের গলার চুলকানি কমাতে কোমল পানি অথবা বরফের টুকরা গলায় ব্যবহার করুন।
  • মধু: কচু শাক খাওয়ার পরে গলা চুলকায় তাহলে এক চা চামচ পরিমাণ মধু খান। এটি খেলে গলা চুলকায় এমন অস্বস্তিকর অবস্থা কমানো যায়।
কচু শাকের গলা চুলকানি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বেশি সমস্যা কারণ হয় তাহলে নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কচু পাতায় হাত চুলকালে করণীয়

যেহেতু কচু শাক সংগ্রহ এবং রান্নার প্রস্তুত করার জন্য হাতের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। এতে অধিকাংশ ব্যক্তির হাত চুলকানোর সমস্যা হয়ে থাকে। তবে কিছু উল্লেখযোগ্য করণীয় আছে যা মেনে কচু শাকের পাতা হাতে নাড়লে হাত চুলকানো এড়িয়ে চলা যায়। কচু পাতায় হাত চুলকালে করণীয় হচ্ছে:
  • হাতের চুলকানো স্থানগুলোতে শীতল পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে কচু পাতার হাতের চুলকানি কমে যাবে।
  • কচু পাতায় হাত চুলকালে এলোভেরা জেল অথবা ঠান্ডা করার ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
  • হাতের চুলকানি যদি বেশি হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • হাত চুলকানোর সময় আরো অতিরিক্ত চুলকানো থেকে বিরত থাকুন, তা না হলে আরো ক্ষতি হতে পারে।
  • কচু পাতায় হাত চুলকালে নারকেল তেল অথবা মিষ্টি তেল ব্যবহার করুন।
কচু পাতায় হাতের চুলকানি যদি অতিরিক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে নিকটবর্তী চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কচু শাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা

কচু শাক খেলে গলা চুলকায়, কিন্তু কচু শাকের অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ফাইবার এমনকি সুষম খাদ্যের প্রধান উৎস কচু শাক। কচু শাকের উপকারিতা হল: 
  • কচু শাক সাধারণত ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ এর প্রধান উৎস। এই ভিটামিন গুলো স্বাস্থ্যের সুস্থতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • ভিটামিন এ চোখের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে।
  • ভিটামিন সি ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যা কচু শাকের বিদ্যমান।
  • ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্ক বিকাশিত করতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় যা খেলে ক্যান্সার এবং হৃদরোগ এর ঝুঁকি কমায়।
  • কচু শাক উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • অন্ত্রের স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে সহযোগীতা করে কচু শাক। এমন কে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সর্বাধিক উপকারী হচ্ছে কচু শাক। নিয়মিত কচু শাক খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে।

কচু শাকের অপকারিতা

কচু শাক সাধারণত অধিকাংশ লোকের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা প্রদান করে। কিন্তু কিছু ব্যাক্তিদের জন্য ভিন্ন। কিডনিতে পাথর আছে বা পূর্বে ছিল এমন ব্যক্তিদের সমৃদ্ধ কচু শাক পরিমাণে কম খাওয়া অথবা এড়িয়ে চলা উত্তম।

কচু শাক খেলে যাদের খুব বেশি গলা চুলকায় অথবা ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল এর সমস্যা আছে তাদের কচু শাক না খাওয়া উচিত।

উপসংহার

আজকের পোষ্টের মূল আলোচ্য বিষয় কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন এই সম্পর্কে। বন্ধুরা আশা করি আপনারা কচু শাক খেলে গলা চুলকানোর কারণ জানতে পেরেছেন। মূলত কচু শাকের ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর উপস্থিতির কারণে গলা চুলকায়। তবে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে সঠিক রান্নার কৌশল এবং প্রয়োজনীয় টিপস ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url