অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে খেতে হয়: ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার বিভিন্ন অব্যর্থ ওষুধী গুনাগুন পাওয়া যায়। কিন্তু কিভাবে খেতে হয়? ভিজিয়ে খাওয়ার কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা জানেন না? আমি আপনাদের জানাবো, অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে খেতে হয়: অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
অর্জুন গাছ একটি বন্যঔষধি এবং চিরহরিৎ গাছ। এই গাছটি হৃদরোগের চিকিৎসা করার জন্য আদিম যুগ থেকেই ঔষধি বৃক্ষ নামে খুবই জনপ্রিয়। অর্জুন গাছের ছাল যদি নিয়মিত নিয়ম করে ভিজিয়ে খাওয়া যায় তাহলে অগণিত স্বাস্থ্য উপকারিতা মিলে। আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে খেতে হয়: অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা যা স্বাস্থ্যের জন্য অধিক উপকারী একটি গাছ।
পোষ্টেরসূচিপত্রঃপ্রিয় বন্ধুরা, আমরা এখন জানব অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে খেতে হয়: অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সকল প্রকার তথ্য।
অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে খেতে হয়
অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার পূর্বে আপনাদের অবশ্যই জানা উচিত কিভাবে বা কোন পদ্ধতিতে খেতে হয়? যার ফলে বেশি পরিমাণে উপকারিতা পাওয়া যায়। যেহেতু অর্জুন গাছের ছাল একটি গাছামো ঔষধ তাই খাওয়ার পূর্বে ছাল গুলোর প্রস্তুত এবং ব্যবহার সঠিক হওয়া উচিত।
- প্রথমত অর্জুন গাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছের ছাল বা চামড়া সংগ্রহ করে নিন।
- চামড়া বা ছাল গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করুন যেন ধুলাবালি, ময়লা-মাটি এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান না থাকে।
- অর্জুন গাছের ছাল গুলো শুকানোর জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে রাখা উত্তম যাতে সরাসরি সূর্য আলো না পায়।
- ছাল বা গাছের চামড়া গুলো ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে পিষিয়ে গুড়া করে নিন। সংরক্ষণ করতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শুকনা পাত্র ব্যবহার করুন।
- অর্জুন গাছের ছালের গুড়ো সাধারণত খাবারের সাথে বা পানির সাথে পরিমাণ মতো নিয়ে মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এছাড়াও খাওয়ার পূর্বে গুঁড়োর সঠিক পরিমাপ করুন অথবা কোন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার নিয়ম
অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার জন্য শারীরিক অবস্থার উপর বিবেচনা করে ডোজ এবং হওয়ার পদ্ধতি অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছ থেকে জেনে নিন।
- অর্জুন গাছের ছাল সরাসরি খাওয়া যায়। আবার গুড়ো করে খেতে পারেন।
- তবে আপনারা যদি ছালের গুড়া খান তাহলে এক গ্লাস পানিতে পরিমাণ মতো মিশিয়ে খেতে পারেন।
- অর্জুন গাছের ছাল এর গুড়া এক থেকে দুই চা-চামচ মিশিয়ে খাওয়া যায় তা অবশ্য যে চিকিৎসকের পরামর্শ।
- গাছটির ছাল গুলোর চা বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে। ছাল গুলো পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে চা করুন।
- এছাড়াও অর্জুন গাছের ছাল এর ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল সেবন করতে পারেন।
- অর্জুনের ছাল দিনে এক বার বা দুই বার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
অর্জুন গাছের ছাল এর পুষ্টি উপাদান
ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ফাইবার, আইরন, গালিক এসিড, স্পোনিশ, ট্যানিনস, পলিফেনস এবং ফ্লাভোনয়েড।
অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার ২০টি উপকারিতা
অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার নানা রকম উপকারিতা যুক্ত হয়। এটি প্রাচীন কালের সুপরিচিত গাছের ওষুধ যা ইংরেজি নাম Terminalia arjuna পাওয়া যায়। এই গাছের ছাল দিয়ে হৃদরোগ নিরাময়সহ ভিজিয়ে খাওয়ার আরো বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এখানে ২০টি সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা উপস্থাপন করা হলো:
- হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি: অর্জুন গাছের ছাল হৃদপেশির শক্তি বৃদ্ধি করে এবং হৃদরোগের জন্য অবাধ্য ঔষধ।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: অর্জুন ছাল উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ করে এবং সম্ভাবনা কমায়।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: এই গাছের ছাল খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
- ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ: কৃষক গবেষণায় পাওয়া গেছে অর্জুন গাছের ছাল নিয়মিত খাওয়ার ফলে ব্লাডের সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- পেটের সমস্যার সমাধান: পেটের গ্যাস, অম্লত্বের হার, এবং অন্তরের সমস্যাগুলো সমাধান করে।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট: অর্জুন গাছের ছালে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর উপকারিতা পাওয়া যায়, যা শরীরের ক্ষতিকর থেকে রক্ষা পায়।
- শরীরের ব্যথা কমায়: এই গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে দেহের ব্যবহার কমানোর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা দেহের ব্যাথানাশক।
- ত্বকের যত্ন: ত্বকের ব্রণ দূর করতে এবং ত্বকের যত্নের জন্য অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করা যায়।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি: অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খেলে হজম শক্তির প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী এবং এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: নিয়মিত অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এন্টি-ব্যাকটেরিয়া, ও অ্যান্টি-ভাইরাস হিসেবে কাজ করে।
- ওজন বৃদ্ধি: অর্জুন গাছের ছাল চর্বি কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
- মানসিক চাপ: অর্জনের ছাল মানসিক চাপ কমানোর গুণাগুণ রয়েছে যা মানসিক ভাবে শান্তি নিশ্চিত করে।
- মূত্রপিন্ড সুস্থ রাখে: এই গাছের ছাল মূত্রপিন্ড ইউরিনারি ট্র্যাক্টের ইনফেকশন দূর করে সুস্থতা দান করে।
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা: অর্জুন গাছের ছাল নিয়মিত পরিমান মত খেলে স্বাস্থ্য সুরক্ষিত এবং সুস্থ থাকে।
- শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন: দেহের ভিতরের ক্ষতিকর টক্সিনগুলো বাহির করতে ভুমিকা রাখে অর্জুন ছাল।
- দেহের শক্তি বৃদ্ধি: স্বাভাবিক ভাবে দেহের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে এই গাছের ছাল।
- মানসিক স্বাস্থ্য: মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা, উন্নত এবং প্রফুল্ল রাখতে অর্জুন গাছের ছাল ভূমিকা রাখতে পারে।
- স্বাভাবিক শক্তি বৃদ্ধি: স্বাভাবিকভাবে দেহের শক্তি করে এবং কাজের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- রক্ত সঞ্চালন: এই গাছের ছাল রক্ত সংক্রম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
- নিরাময় ক্ষমতা বৃদ্ধি: শরীরের কোন স্থানে ঘা বা ক্ষত হলে ওজুন গাছের ছালে দ্রুত চালিয়ে তুলতে পারে।
আরো পড়ুনঃ লাল ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
অর্জুন গাছের ছালের এই উপকারিতা গুলো সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য ও উপকারিতা হতে পারে, তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে একেক মানুষের একেক রকম রয়েছে।
অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খেলে, কিভাবে ভিজিয়ে খেতে হয় বা ভিজিয়ে খাওয়ার কিছু সাধারন নিয়ম জেনে নিন।
- অর্জুনের গাছ থেকে বা বাজার থেকে ছাল সংগ্রহ করে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
- ৫ থেকে ১০ গ্রাম অর্জুন গাছের ছাল ছোট ছোট টুকরা করে কেটে নিন।
- ছাল ভেজানোর জন্য পরিষ্কার কাচের পাত্র বা মাটির পাত্র সংগ্রহ করুন।
- পাত্রে এক থেকে দুই কাপ পানিতে এর অর্জুনের ছাল কমপক্ষে 8 থেকে 10 ঘন্টা ঘুমানোর পূর্বে ভিজিয়ে রাখুন।
- সকালে ভিজিয়ে রাখা অর্জুন গাছের ছালের পানে ছাঁকনি ব্যবহার করে আলাদা করে নিন।
- দিনে থেকে দুইবার অর্জুন ছালের পানি পান করুন তা অবশ্যই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
অর্জুন গাছের ফলের উপকারিতা
অর্জুন গাছের ফলের কিছু সাধারণ ও প্রধান উপকারিতা সম্পর্কে নিজে আলোচনা করা হলো:
- হৃদরোগ নিরাময়ে অর্জুন গাছের ফল বা ছাল ব্যবহার করা হয়।
- অর্জুন গাছের ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- এই গাছের ফল হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে অর্জুন এর ফল।
- এন্টি ইনফ্লামেটরি যার শরীরের যন্ত্রণা কমাতে গুন রয়েছে যা এটি অর্জুন গাছের ফলে পাওয়া যায়।
- অর্জুন গাছের ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- অর্জনের ফলগুলো খাওয়ার ফলে শরীরে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে যা সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
অর্জুন গাছের পাতার বৈশিষ্ট্য
পাতার বৈশিষ্ট্য
অর্জুন গাছের পাতা বিশেষ করে ঔষুধ এবং পরিবেশগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- গাছের পাতা সাধারণত লম্বা এবং কিছুটা চওড়া হয়। যা প্রতিটি পাতা ১০ থেকে ২০ সেমি লম্বা, ৫ থেকে ৮ সেমি চওড়া।
- অর্জুন এর পাতার সাধারণ রং সবুজ উপরে, হালকা সোনালী বা সাদা নিচে হয়।
- অর্জুন গাছের সরল পাতার বৈশিষ্ট্য, সমতল অথবা হালকা খাঁজ কাটা দেখা যায়।
পাতার ঔষধি বৈশিষ্ট্য
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- আন্টি ইনফ্লেমেটরি
- হৃদরোগ চিকিৎসা
- মূত্র বর্ধক বৈশিষ্ট্য
- হজমের উন্নত
- রক্ত সঞ্চালন উন্নত
অর্জুন গাছের ছাল কোথায় পাওয়া যায়
অর্জুন গাছের ছাল পাওয়া যায় এমন কয়েকটি উৎস সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো:
- অনেক গুলো স্থানীয় গাছের ঔষধ এর দোকান আছে যেগুলোতে অর্জুন গাছের ছাল পাওয়া যায়।
- অর্জুন গাছের ছাল কিছু বিশ্বস্ত অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে যেমন দারাজ ও অন্যান্য জনপ্রিয় সাইটে পাওয়া যায়।
- অর্জুন ছাল আয়ুর্বেদিক ওষুধের দোকান, ক্লিনিক ও হেলথ সেন্টার পাওয়া যায়।
- এছাড়াও যেহেতু এটি বন ঔষধী গাছ সেক্ষেত্রে গাছের ছাল বোনের ভিতর ও পাওয়া যেতে পারে।
- আমার দেখা কিছু কিছু জায়গায় রাস্তার ধারে অর্জুন গাছ পাওয়া যায়।
অর্জুন গাছের ছবি
আমাদের শেষ কথা
অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার জন্য অবশ্যই জানা গুরুত্বপূর্ণ অর্জুন গাছের ছাল কিভাবে খেতে হয়। বিষয়টি জেনে যদি নিয়মিত পরিমাণে অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা বহু গুনে পাওয়া যায়। সেই লক্ষ্যে আমাদের ওয়েবসাইটের এই আর্টিকেলটি অর্জুন গাছের ছাল খাওয়ার নিয়ম এবং ভিজিয়ে খাওয়ার সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা জানতে সাহায্য করবে। যেখানে আপনি অর্জুন গাছের ছাল সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন। আজকের পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url