১০টি বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকা
বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকা অন্তর্ভুক্ত বর্ষাকালীন সবজি বা মৌসুমী সবজিগুলো আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই জানিনা। কিন্তু বর্ষাকালীন সময়ে এবং যেকোনো মৌসুমে আমাদের প্রিয় খাবারের মধ্যে সবজি অন্যতম।
প্রতিনিয়ত আমরা সবজি খায়। তবে বর্ষাকালীন সবজি গুলো সম্পর্কে জানা আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে চলুন আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জেনে নেই ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকা সহ বর্ষাকালীন সবজির কি কি পুষ্টি গুন আছে এবং বর্ষাকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত।
আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা এখন জানবো বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকা, ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম, বর্ষাকালীন সবজির পুষ্টিগুন এবং বর্ষাকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সকল তথ্য।
বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকা
বর্ষাকালে যে সব সবজি চাষ করা হয় সেগুলোকেই বর্ষাকালীন সবজি বলে। বর্ষাকালীন সবজির অনেক চাহিদা এবং অনেক পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। এমনকি বর্ষাকালীন সবজির চাষিরা বর্ষাকালীন সবজি চাষ করেন। তাহলে জেনে নিন বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকায় কি কি সবজি আছে।
শসাঃ শসা একটি লতা জাতীয় বর্ষাকালীন সবজি। যা বর্ষাকালীন মৌসুমে বড় হয়। শসা চাষ করতে জমিতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে এমন জমি নির্বাচন করুন এবং ভালো ভাবে মাটি প্রস্তুত করুন।
বোতল করলা বা লাউকিঃ বর্ষাকালে দ্রুত বৃদ্ধি হতে পারে এমন একটি সবজির নাম বোতল করলা বা লাউকি। সবজিটি চাষে প্রচুর পরিমানে পানির প্রয়োজন হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানির ঘাটতি পরে না এবং ভালো ফলন পাওয়া যায়।
ওকরা বা লেডিফিঙ্গারঃ ওকরার আরেক নাম লেডিফিঙ্গার। সবজিটি অনেকের পছন্দের একটি খাবার। ওকরা বা লেডিফিঙ্গার সবজি বর্ষার উষ্ণ আর্দ্রতায় ভালো জন্মায় এবং ফলন ও ভালো হয়।
পালং শাকঃ বর্ষা মৌসুমে দ্রুত বর্ধনশীল লতা পাতা যুক্ত সবুজ সবজির নাম পালং শাক। এই সবুজ সবজি একবার চাষে একাধিক বার তোলা যায়।
করলাঃ করলা হচ্ছে বর্ষাকালির মৌসুমের আরেকটি সবজির নাম। বর্ষাকালীন সময়ে করলা উষ্ণ এবং আদ্র পরিবেশে জন্মায় এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই সবজিতে অনেক স্বাদ এবং অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতায় অন্যতম ভূমিকা রাখে।
মুলাঃ বর্ষা মৌসুমীর জন্য মূলা সবজি চাষ করা উপযুক্ত সময়। বর্ষায় মুলা চাষ করলে দ্রুত বড় হয়। মুলা চাষের জন্য ভালো এবং উপযুক্ত মাটির প্রয়োজন।
সবুজ মটরশুটিঃ সবুজ মটরশুটি এমন একটি বহুমুখী সব যে যা বর্ষাকালে বেশি চাষ করা হয়। এই সবুজ সবজির উষ্ণ জলবায়ুতে ভালো জন্মে এবং বেশি ফলন পাওয়া যায়।
বেগুনঃ বেগুন একটি জনপ্রিয় সবজি বর্ষা মৌসুমের উপযুক্ত ফসল।বেগুন চাষে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়। তাই বর্ষাকাল বেগুন চাষের জন্য উত্তম সময়।
কুমড়াঃ কুমড়া এমন একটি সবজি যা বর্ষাকালের অধিক বৃষ্টি সহ্য করতে পারে। কুমড়া চাষ করতে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পাওয়া যায় এমন তুমি নির্বাচন করুন।
আমরান্থঃ সবুজ পাতাযুক্ত বর্ষাকালীন সবুজ সবজির নাম আমরান্থ। এই সবুজ সবজি বর্ষাকালে চাষ করলে একাধিকবার ফলন পাওয়া যায়।
সবজি |
শাক |
লাউ |
লাউ শাক |
চাল কুমড়া |
পটল শাক |
কাঁকরোল |
কাঁকরোল শাক |
টমেটো |
সজনা শাক |
ধুন্দুল |
ঝিঙা শাক |
ঢেঁড়স |
সাচি শাক |
কচু |
পাট শাক |
বেগুন |
পুঁই শাক |
করলা |
ধুন্দুল শাক |
ঝিঙা |
ঢেঁড়স শাক |
মিষ্টি কুমড়া |
শাপলা শাক |
পটল |
গিমাকলমি শাক |
শসা |
লতিরাজ শাক |
কচু লতি |
কলমি শাক |
পেঁপে |
ডাঁটা শাক |
১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম ও বর্ষাকালীন সবজির পুষ্টিগুন
আমি এখন আলোচনা করবো ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম ও বর্ষাকালীন সবজির কি কি পুষ্টিগুন আছে তা নিয়ে বিস্তারিত। মৌসুমী বিভিন্ন শাক সবজি আমাদের সকলের অনেক প্রিয়। এছাড়া বর্ষাকাল সহ অন্যান্য মৌসুমের সবজিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উপাদানে ভরপুর থাকে।তাই বর্ষাকালের সবুজ শাকসবজি খেলে শরীর-মন সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং আমাদের অবশ্যই জানা প্রয়োজন বর্ষাকালীন সবজির নাম এবং এর পুষ্টি কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে তা সম্পর্কে। তাহলে আর দেরি না করে জেনে নিন ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নাম ও বর্ষাকালীন সবজির পুষ্টিগুন সম্পর্কে সকল তথ্য।
লাউঃ লাউ বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয় ফলে লাউ ফলে লাউয়ের দাম তুলনামূলক কম থাকে। ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ফাইবার এর অন্যতম উৎস হচ্ছে লাউ। লাউ খাওয়ার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে আপনার পাতলা চুল ঘন করবেন
ঢেঁড়সঃ ঢেঁড়স বর্ষাকালের ফসল হওয়ায় প্রচুর পরিমাণ চাষ করা হয়। এই সময় ঢেঁড়স স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায়। ঢেঁড়স ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। ঢেঁড়স খেলে চোখের সমস্যার সমাধান করে, হাড় শক্ত ও মজবুত করে, দ্রুত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পুঁইশাকঃ পুই শাক হচ্ছে বর্ষাকালের একটি সবুজ শাকসবজি। এই সবুজ সবজিতে বর্ষাকালে কম দামে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।বৈশাখে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি এবং আয়রন থাকে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কাজ করে। এমনকি দেহের নতুন রক্ত তৈরি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ঝিঙ্গাঃ ঝিঙা একটি বর্ষাকালীন ফসল ফলে বর্ষা মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে ফলন হয়। তাই বর্ষা মৌসুমে ঝিঙ্গার দাম তুলনামূলক কম থাকে। বর্ষাকালীন এই সবজিটি ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
শসাঃ বর্ষা মৌসুমে শসা প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়। শসা পটাশিয়াম, ফাইবার এবং ভিটামিন সি এসব ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে। শসা খাওয়ার ফলে দেহের পানি শূন্যতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
ধুন্দুলঃ বর্ষাকালে চাষ করা ধুন্দুল সবজি দেহের রক্ত পরিষ্কার করে এবং ডায়াবেটিস বা সুগার নিয়ন্ত্রণ করে।
কাঁকরোলঃ বর্ষাকালের সবজি কাঁকরোলে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, খাইবার ও পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
পটলঃ বর্ষা মৌসুমের পটল অত্যন্ত পছন্দের একটি খাবার। পটলে অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে তারমধ্যে এটি হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
করলাঃ বর্ষাকালীন সবজি হচ্ছে করলা। করলাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
চিচিঙ্গাঃ চিচিঙ্গা বর্ষা মৌসুমের উপযুক্ত সবজি। চিচিঙ্গা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী সবজি। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং ত্বক সুস্থ রাখে।
বর্ষাকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি
বর্ষাকালে সবজি চাষ করার পূর্বে জমি চাষ পদ্ধতি জানা আবশ্যক। আপনি যদি ভালোভাবে বর্ষাকালীন সবজি চাষ করার জন্য ভালোভাবে জমি প্রস্তুত করেন তাহলে ভালো ফলন পাবেন। সুতরাং আপনাকে আগে জানতে হবে বর্ষাকালীন সবজি চাষ করার জন্য কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে উচ্চ ফলন পাওয়া যাবে। তাহলে জেনে নিন বর্ষাকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত।
জমি প্রস্তুত করাঃ সবজি চাষ পদ্ধতির প্রথম ধাপ হচ্ছে জমি নির্বাচন এবং মাটি প্রস্তুতকরণ। জমি এমনভাবে প্রস্তুত করুন যেন জমিতে পানি জমে না থাকে। অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে গাছের শিকড় পচা রোগ হতে পারে ফলে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়তে পারেন।
মাটি চাষ করাঃ ভালোভাবে জমিতে চাষ দিন। সম্পূর্ণ মাটি যেন ঝুরঝুরে হয়ে যায় নিশ্চিত করুন। মৌসুমে ফসলের উপর ভিত্তি করে বেড তৈরি করা ভালো।
ভালো বীজ নির্বাচন করুনঃ যেকোনো ফসল পূর্বে সঠিক বীজ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কিট পতঙ্গ ও রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এমন উচ্চ মানের নির্বাচন করুন। বর্ষা মৌসুমে হাইব্রিড জাতের বীজ বেছে নিতে পারেন।
কীটপতঙ্গ প্রতিরোধ করুনঃ সাধারণত অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি কীট পতঙ্গের কার্যক্রম দেখা যায়। কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কৃষি অফিসারের পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করুন। এছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যেমন নিমের তেল ব্যবহার করে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
জমিতে সেচ দেওয়াঃ বর্ষাকালে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হয়ে থাকে তাই জমিতে পরিমাণ মতো পানি দেওয়া প্রয়োজন। যদি জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে যায় তাহলে পানি নিষ্কাশন করুন।
মালচিং ব্যবহার করুনঃ বর্ষাকালীন সময়ে সবজি চাষ করার অন্যতম পদ্ধতি হচ্ছে মালচিং এর ব্যবহার। মালিং ব্যবহারে মাটির আদ্রতা ধরে রাখে। এছাড়াও আগাছা দমন করে এবং মাটিতে পুষ্টি উপাদান তৈরি করে।
আরো পড়ুনঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কি খাবেন
বর্ষাকালীন সবজি চাষের উপকারিতা
বর্ষাকালে সবজি চাষ করলে নানা ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। এই সময় শাকসবজি চাষ করলে পরিচর্যা কম করা লাগে। জমিতে পানি সেচ দেওয়া লাগে না বললেও চলে। জমিতে থাকা পচনশীল উদ্ভিদ গুলো পৌঁছে জৈব সার তৈরি করে যা মাটি উর্বর করে। ফলে বর্ষাকালীন সবজির ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকালীন সবজিতে প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
প্রিয় বন্ধুরা, বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদের জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম ১০টি বর্ষাকালীন সবজির নামের তালিকা, বর্ষাকালীন সবজির পুষ্টিগুণ এবং বর্ষাকালীন সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সকল তথ্য। এই রকম বিষয় সহ স্বাস্থ্য ও টেকনোলজি বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের মানি মেকার আইটি তে নিয়মিত চোখ রাখুন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url