গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা: কি জানেন
গর্ভাবস্থায় আপনি কি দৈনিক ভাতের মাড় খাওয়া পছন্দ করেন। কিন্তু গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ভাতের মাড় খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। চলুন আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের জানাবো, গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।
ভূমিকা
গর্ভকালীন সময় একজন মায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রেখে সচেতন থাকা প্রতিটি গর্ভধারিনী মায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন খাবার ও বিভিন্ন অভ্যাস মেনে চলার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। এমন একটি খাবার সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চলেছি যার গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা অপরিসীম। খাবারটির নাম হচ্ছে ভাতের মাড়। নিয়মিত ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে প্রতিটি মায়ের গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি এবং মা ও ভ্রনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রিয় বন্ধুরা, আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জানবো, গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সকল তথ্য। কিন্তু আজকের পোষ্টের উক্ত আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানার পূর্বে আমরা জেনে নেই ভাতের মাড় কি?
ভাতের মাড় কি
ভাতের মাড় সাধারণত আমরা ভাতের ফ্যান বা ভাতের অতিরিক্ত পানি বলে চিনি। ভাত রান্না করার পর ভাতের সাথে যে অতিরিক্ত সাদা অংশ বা গাড় সাদা রঙের পানি পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে ভাতের ফ্যান বা ভাতের মাড়। অনেকে আছেন যারা ভাতের মাড় ফেলে দেন আবার কিছু কিছু অঞ্চলে ভাতের মাড় খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের যেসব পুষ্টি উপাদান যোগায় তাহলো ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, আয়রন এবং স্বাস্থ্য প্রয়োজনীয় সকল গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ ইত্যাদি। এছাড়াও ভাতের মাড়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩, ও ভিটামিন বি ৬ ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে থাকে। একজন মা যদি গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে উপরে উল্লেখিত পুষ্টিগুলো মা ও নবজাতক উভয়ের জন্য সুস্থতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
হজম শক্তির বৃদ্ধি করে
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে দ্রুত হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মহিলার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমে সমস্যা, ও পেট ফুলে যাওয়ার মত সমস্যা হয় তাহলে ভাতের মাড় খেলে উক্ত সমস্যাগুলো সারিযে তুলতে সহায়তা করবে।
পানি শূন্যতা দূর করে
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার অভ্যাস গড়লে শরীরের পানির চাহিদা ও পানির ঘাটতি পূরণ করে। ফলে ডিহাইড্রেশন, ইলেক্ট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। শরীরের পানির মাত্রা সর্বোত্তম নিশ্চিত করতে সারাদিন অল্প পরিমাণে ভাতের মাড় খাওয়া প্রয়োজন।
নবজাতক বা ভ্রূনের বিকাশে
ভাতের মাড় খেলে নবজাতকের ভ্রূনের সুস্থ বিকাশ বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই খাবারটি শিশুদের মস্তিষ্ক, বায়ু তন্ত্র, ত্বকের, চোখের, শরীরের হাড় গঠনে ভূমিকা অপরিসীম। ভাতের মাড় গর্ভবতী মা ও শিশুর শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
সকালের দুর্বলতা প্রতিরোধ করে
নিয়মিত ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় সকালের শারীরিক দুর্বলতা দূর করে। প্রতিটি গর্ভবতী মা তার গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে অনেক শারীরিক দুর্বলতা, বমি বমি ভাব বমি হওয়া ইত্যাদি দূর করার জন্য ভাতের মাড় অব্যার্থ কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মহিলার বিভিন্ন শারীরিক দুর্বলতা এবং রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে পরিমাণ মতো প্রতিদিন ভাতের মাড় খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে।
অস্বাভাবিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলাদের দেহের ওজন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাতের মাড়ে ও স্বাস্থ্যকর চর্বি পাওয়া যায়, ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। এছাড়াও ভ্রূনের স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে।
গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি দূর করে
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খেলে শরীরে দ্রুত শক্তি উৎপন্ন করে এবং ক্লান্তি দূর করতে কাজ করে খাবারটি। ফলে গর্ভবতী মহিলা কোনরকম ক্লান্তি ছাড়াই সারাদিন কাজ করতে সক্ষম।
ত্বকের সুস্থ রাখে
গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মহিলার এবং নবজাতকের ত্বকের সুস্থতার জন্য ভাতের মাড় খাওয়া প্রয়োজন। ভাতের মাড় খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মহিলাদের এবং নবজাতকের ত্বক সুস্থ রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ভাতের মাড় ত্বকের প্রদাহ এবং লাল হয়ে যাওয়া কমায়।
কিভাবে ভাতের মাড় তৈরি করতে হয়
ভাতের মাড় প্রস্তুত করতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। যা আপনি চাইলে বাড়িতে বসে ভাতের মাড় তৈরি করতে পারবেন। তাহলে জেনে নেই কিভাবে ভাতের মাড় তৈরি করতে হয়।
- পরিমাণ মতো চাউল নিন।
- ভালোভাবে চাউল ধুয়ে ফেলুন।
- একটি পাত্রে পরিমাণ মতো পানি নিন যা চাউলের থেকে প্রায় চার গুণ বেশি হয়।
- পাত্রটি চুলায় চাউল সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত জাল দিন।
- চাউল সিদ্ধ হয়ে গেলে ভাতে পরিণত হবে।
- ভাতের মাড় সংগ্রহ করতে ভালোভাবে ছেকে নিন।
ভাতের মাড় সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়া যাবে কি?
গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকার।তবে প্রতিটি খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতা থাকে। সেজন্য গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খেতে হলে অবশ্যই ভাতের মাড়ের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে ভাতের মাড় খাওয়া উচিত।
ভাতের মাড় খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকার?
ভাতের মাড় খাওয়া স্বাস্থ্যের অনেক উপকারিতা পাওয়া যায় যেমন স্বাভাবিক বৃদ্ধি রোদ করে, শরীরের যোগায়, ক্লান্তি দূর করে এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে ইত্যাদি।
দৈনিক কতটুকু ভাতের মাড় খাওয়া ভালো?
দৈনিক এক গ্লাস পরিমাণ ভাতের মাড় খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে দিনে দুই থেকে তিন বার পর্যন্ত খেতে পারেন।
শেষ কথা
আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং জানতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় ভাতের মাড় খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। আমাদের ওয়েবসাইটের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া আমি আপনাদের অনুরোধ করবো আজকের পোস্ট সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে ভুলবেন না।চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট এ নিয়মিত চোখ রাখুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url