ব্রেন টিউমার হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়: প্রকার ও চিকিৎসা
আজকের পোস্টে আপনাদের জানাবো ব্রেন টিউমার হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়। ব্রেন টিউমার এমন একটি গ্রুরুতর অবস্থা যা মস্তিষ্কের মধ্যে এর থাকার ধরন এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ পায়।
ব্রেন টিউমারের লক্ষণগুলো শনাক্ত করে চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আর্টিকেলটিতে আমি ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো কি কি দেখা যায়, ব্রেন টিউমার কত প্রকার কি কি এবং ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা সম্পর্কে উপস্থাপন করলাম।
ব্রেন টিউমার হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায়
ব্রেন টিউমার এর সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রাথমিক লক্ষণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
মাথা ব্যথাঃ মাথা ব্যথা ব্রেন টিউমারের সাথে যুক্ত সাধারণ লক্ষণ গুলির মধ্যে একটি। প্রায় মানুষ মাথা ব্যথার সমস্যা নিয়ে ভুগে। তবে বেন টিউমারের দারা সৃষ্ট মাথাব্যথা সাধারণ মাথা ব্যাথার চেয়ে আরো তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়। ব্রেন টিউমার রোগী সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মাথা ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি পায় বেদনাদায়ক হতে থাকে। ব্রেন টিউমারের রোগীর মাথা ব্যথা হলে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
খিচুনিঃ ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম আহত করার ফলে খিচুনি হতে পারে। ব্রেন টিউমার রোগীর খিচুনি একাধিক ধরনের হয়। যেমন ফোকাল খিচুনি,সাধারণ খিচুনি ও অনুপস্থিতি খিচুনি।
জ্ঞানের পরিবর্তনঃ ব্রেন টিউমার মস্তিষ্কে জ্ঞানের পরিধি সংকুচিত করতে পারে। যেমন স্মৃতিশক্তি দুর্বল বা কমায়। যেকোনো তথ্য সহজে বুঝতেও সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
ব্যক্তিত্বের পরিবর্তনঃ ব্রেন টিউমারের কারণে নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায়। যেমন সহজে বিরক্ত বোধ বা হতাশ হয়ে যায়। বিভিন্ন কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
কথা বলার অসুবিধাঃ ব্রেন টিউমারের কারণে কথা বলার সক্ষমতা খেলতে পারে। মস্তিষ্কের টিউমারের জন্য কথা বলতে সুবিধা হয়। কথা বলার সময় ভাষার অস্পষ্টতা এবং কথা বলতে বেধে যাওয়া ওই লক্ষিত হয়। কথা বলতে গেলে কি বলবে তার ভাষা খুঁজে পেতে সমস্যা হয়।
দৃষ্টির সমস্যাঃ ব্রেন টিউমার বিভিন্ন ভাবে দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করতে পারে। ব্রেন টিউমারের ফলে স্পষ্ট দেখতে অসুবিধা হয় এবং দেখার সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন বলতে এমন জিনিস দেখা যায় যা সেখানে নেই। এরকম পরিস্থিতি শিখার হতে পারে।
শ্রবণ শক্তি পরিবর্তনঃ ব্রেন টিউমার শ্রবণ শক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। ব্রেন টিউমারের কারণে আস্তে আস্তে কানে কম শুনতে থাকে। কানের ভেতর ক্রমাগত শব্দ অনুভব করে। অডিটরি হ্যালুসিনেশন সমস্যা সৃষ্টি হয় যেমন উপস্থিতি নেই এমন শব্দ শুনতে পায়।
শরীরের অঙ্গ পতঙ্গের দুর্বলতাঃ ব্রেন টিউমার হওয়ার কারণে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যায়। মুখ বাহু পায়ে শক্তি কম পায়। আস্তে আস্তে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অল্পতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।
সংবেদনশীল পরিবর্তনঃ মস্তিষ্কের টিউমারের কারণে সংবেদনশীল পরিবর্তন হতে পারে। এর ফলে খাবারের স্বাদ গ্রহণ, গন্ধ অনুভূতি ত্বকে অস্বাভাবিক সংবেদনশীলতা পরিলক্ষিত হয়।
দ্রুত ওজন কমে যায়ঃ খাদ্যাভ্যাস বাদ্যামের পরিবর্তন ছাড়াই অনিচ্ছাকৃত ওজন কমে যায় ব্রেন টিউমারের কারণে। মস্তিষ্কের টিউমারের জন্য বিপাকীয় প্রতিক্রিয়ার কারণে এটি হতে পারে।
ক্লান্তিঃ অপ্রতিরোধ্য এবং ক্রমাগত ক্লান্তি ব্রেন টিউমারের কারণে হতে পারে। এটি ব্রেন টিউমারের একটি লক্ষণ।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার ফলে হরমোন এর ভারসাম্যহীনতার কারণ হতে পারে। ব্রেন টিউমার হওয়ার কারণে অনিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ডের উপর প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে যৌন শক্তি এবং থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়।
ব্রেন টিউমার কত প্রকার ও কি কি?
ব্রেন টিউমার প্রধানত দুই প্রকার যেমনঃ
- ম্যালিগ্যান্ট টিউমার যা ক্যান্সার সৃষ্টি করে
- বেনাইন টিউমার এটি ক্যান্সার না।
ম্যালিগ্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার টিউমার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
- প্রাইমারি টিউমার।
- সেকেন্ডারি টিউমার বাপ মেটাস্ট্যাসিস টিউমার।
ব্রেন টিউমার হলে করনীয়
- ব্রেন টিমার থেকে মুক্তি পেতে ধূমপান ত্যাগ করুন।
- তেজস্ক্রিয় রশ্মি যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি এগুলোর ব্যবহার যত সম্ভব কম করার চেষ্টা করুন।
- ভেজালমুক্ত বা ফরমালিন মুক্ত খাবার যেমন ফলমূল,শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- আপনার যদি ব্রেন টিউমারের লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয় তাহলে একদম ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। একজন ডাক্তার আপনার লক্ষণ গুলো মূল্যায়ন করতে এবং প্রয়োজনে নিরীক্ষা করতে পারবেন।
ব্রেন টিউমার নির্ণয়
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এবং লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে ব্রেন টিউমার নির্ণয় করা যায়। ব্রেন টি বা নির্ণয় করতে ডাক্তার যে ধরনের পরীক্ষা করে থাকেন তাহলোঃ
- এমআরআইঃ এটি মস্তিষ্কের একটি বিস্তারিত চিত্র তৈরি করে এবং টিউমারের আকার অবস্থান নির্ধারণ করতে পারে।
- সিটি স্ক্যানঃ এটি মস্তিষ্ক এক্সরে ছবি তৈরি করে ফলে ব্রেন টিউমারের আকার এবং অবস্থান নির্ধারণ করা যায়।
- পেটের স্ক্যানঃ টিউমার পেটের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়।
- টিস্যু বায়োপসিঃ ব্রেন টিউমারের কোর্সগুলোর একটি নমুনা পরীক্ষা করে এবং টিউমারের ধরন নির্ধারণ করা যায়।
ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা
ব্রেন টিউমার এর চিকিৎসা নির্ভর করবে টিউমারের আকার, অবস্থান, ধরন এবং আপনার স্বাস্থ্যের উপর।
অস্ত্রোপচারঃ টিউমার অপসারণ করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়।
রেডিও থেরাপিঃ উক্ত শক্তির বিকিরণ ব্যবহার করে টিউমারের কোষ গুলোর কার্যকারিতা ধ্বংস করে।
কিমো থেরাপিঃ বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহার করে টিউমারের ক্ষতিকর কোষ গুলো হত্যা করে।
টার্গেট থেরাপিঃ নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তনের সাথে টিউমারের কোষ গুলো লক্ষ্য করে ধ্বংস করার জন্য এ ধরনের চিকিৎসা ব্যবহার করে।
শেষ কথা
ব্রেন টিউমারের লক্ষণগুলো যদি তাড়াতাড়ি সনাক্ত করা যায় তাহলে দ্রুত রোগ নির্ণয় করা চিকিৎসকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বা আপনার কাছের কেউ যদি ব্রেন টিউমার লক্ষণগুলো অনুভব করেন তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। দ্রুত কার্যক্রম মস্তিষ্কের ট্রিমার যুক্ত ব্যক্তির জীবনের মান উন্নত করতে পারে। আশা করি এই আর্টিকেলের মূল বিষয় ব্রেন টিউমার হলে কি কি লক্ষণ দেখা যায় জানতে পেরে আপনার জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে ইনশাআল্লাহ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url