রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় - দুধে কি কোলেস্টেরল আছে?

আজকের আর্টিকেলে আমি আলোচলা করবো রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় এবং দুধে কি কোলেস্টেরল আছে এ বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় - দুধে কি কোলেস্টেরল আছে
রক্তে যদি হঠাৎ করে কোলেস্টরল বেড়ে যায় তাহলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তবে আপনি যদি জানতে পারেন রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় কি তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তাহলে জেনে নিন রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় ও দুধে কি কোলেস্টেরল আছে এ বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয়

রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাহলে জেনে নিন রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় কিঃ

জীবনধারার মান পরিবর্তন

  • দৈনিক ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে সহজে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। 
  • অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। অতিরিক্ত ওজন কখনো শরীরের জন্য কাম্য নয়। 
  • ধূমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ রূপে ত্যাগ করুন। 
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। একজন ব্যক্তির দৈনিক সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন।

খাবারের পরিবর্তন

  • রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে মাছের তেল সয়াবিনের তেল জলপাইয়ের তেল বাদাম ইত্যাদি বেশি করে খাওয়া ভালো।
  • রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে চর্বিযুক্ত খাবার ত্যাগ করুন।
  • ব্রেড ফল বাদাম বীজ ইত্যাদি কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • দৈনিক পরিমাণ মতো প্রোটিন যুক্ত খাবার যেন আজ মাংস দুধ ইত্যাদি খেতে পারেন। 
  • প্রতিদিন খাবারে ফল, শাকসবজি রাখার চেষ্টা করুন।
  • রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে অধিক পরিমাণে পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন। পানি কোলেস্টরলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

দুধে কি কোলেস্টেরল আছে?

দুধে কোলেস্টেরল নিয়ে অনেকের প্রশ্ন দুধে কি কোলেস্টেরল আছে?। তবে দুধের কোলেস্টেরল থাকলেও দুধের ধরন অনুসারে কোলেস্টরলের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। গরুর দুধে সাধারণত আনুমানিক ফাইভ ৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল আছে। 
রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় দুধে কি কোলেস্টেরল আছে?
যেসব দুধগুলো চর্বিযুক্ত সে দুধে কোলেস্টোরল পরিমাণ বেশি হয়, কম চর্বিযুক্ত দুধে কম পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে। কোলেস্টেরল সাধারণত দুই ধরনের এইচডিএল ও এলডিএল। দুধে যেসব কোলেস্টেরল থাকে তারমধ্যে বেশিরভাগ হচ্ছে এলডিএল। এছাড়াও এইচ ডি এল কোলেস্টেরল দুধে খুবই কম পরিমাণে পাওয়া যায়। 

রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ

রক্তে কোলেস্টেরল লক্ষণ গুলো সাধারণত পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করা যায় না কারণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে যেসব লক্ষন দেখা যায় তা হলোঃ
  • হাঁটার সময় পা ব্যথা হয় এবং ক্লান্তি হয়ে যায়। 
  • স্ট্রোক করার লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয়। 
  • চোখের পাতা হলুদের রং ধারণ করে। 
  • শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং বুকে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • প্রসাবের সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হয়

রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তাহলোঃ
  • রক্তের কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে হৃদ রোগের ঝুকি বেড়ে যায়। যেমন কোলেস্টেরল যুদ্ধের কারণে রক্ত প্রবাহ সংকুচিত হয় এবং হৃদরোগ সম্ভাবনা বেশি থাকে। 
  • রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার কারনে ধমনীতে প্লাক জমা হয় তখন বুকে ব্যথা হয়। 
  • কোলেস্টেরল এই কারণে পায়ে ক্ষত হওয়া, ভুলে যাওয়া পায়ে ব্যথা করা এবং পা ঠান্ডা হওয়ার মত রোগ দেখা দেয়।
  • কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। 
  • প্রসাবের সমস্যা হওয়ার কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
  • কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। 

কোলেস্টেরল কমানোর ব্যায়াম

কোলেস্টেরল কমাতে হলে ব্যায়াম অত্যন্ত করার উপায়। আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাহলে সহজে কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। কোলেস্টেরল কমানোর জন্য যেসকল ব্যায়াম নিয়মিত করবেন তাহলোঃ
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট দ্রুত হাটা বা দৌড়ানোর চেষ্টা করুন। যা আপনার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করবে। 
  • সাঁতার এমন একটি ব্যায়াম যেখানে শরীরের প্রত্যেকটা অংশ সমানভাবে কাজ করে। নিয়মিত সাঁতার করলে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। 
  • কোলেস্টেরল কমানোর কার্যকরী ব্যায়াম হচ্ছে নিয়মিত সাইকেল চালানো। 

কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায়

কিছু নিয়ম মেনে চললে কোলেস্টেরল থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়। আপনি যদি খাবারে এবং জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন করেন তাহলে সহজেই কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন জেনে নি কোলেস্টেরল কমানোর মুক্তির উপায়।

জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করলে কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
  • কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • ধূমপান মদ্যপান ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন। 
খাদ্য নিয়ন্ত্রণঃ
রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় - দুধে কি কোলেস্টেরল আছে
  • নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, বাদাম, শাকসবজি, ফল, ছোলা ইত্যাদি প্রোটিন যুক্ত খাবার।
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন অল শাকসবজি বাদাম বীজ শস্যদানা বেশি করে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

কোলেস্টেরল কমানোর ঘরোয়া উপায়

ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়াও ঘরোয়া উপায়ে কোলেস্টেরল কমানো যায়। আপনি যদি নিয়মিত এই ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চলতে পারেন তাহলে খুব সহজে কোলেস্টেরল কমাতে পারবেন। 
  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। 
  • নিয়মিত স্বাস্থ্যকর তেল যেমন কোকোনাট অয়েল অলমন্ড অয়েল অলিভ অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করুন। 
  • প্রতিদিনের খাবার শাক সবজি যেমন ব্লকলি পটল গাজর পালং শাক শতমূলী ইত্যাদি জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • তেল জাতীয় এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চল্লে কোলেস্টেরল কমানো যায়। 
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন এটি কোলেস্ট্রল কমানোর জন্য কার্যকরী উপায়। 
এছাড়াও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চেকআপ করা প্রয়োজন।

রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় (FAQ)

প্রশ্নঃ রক্তে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কি হয়?
উত্তরঃ রক্তের চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক করার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্নঃ রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেলে কি হয়?
উত্তরঃ রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগ চৈত্র রক্তচাপ ও ভ্রমণি সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্নঃ রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় কেন?
উত্তরঃ ইনসুলিন নামক হরমোন দ্বারা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।

প্রশ্নঃনরমাল কোলেস্টেরল এর লেভেল কত?
উত্তরঃ নরমাল কোলেস্টেরল এর লেভেল 200 mg/dL - 239 mg/dL হয়ে থাকে।

প্রশ্নঃ দৈনিক কতটুকু কোলেস্টেরল এর মাত্রা থাকে?
উত্তরঃ প্রতিদিন 300 mg এর বেশি কোলেস্টেরল থাকা উচিত নয়।

প্রশ্নঃ কোলেস্টেরল বেশি হলে কি শ্বাসকষ্ট হয়?
উত্তরঃ কোলেস্টেরল বেশি হলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

প্রশ্নঃ অতিরিক্ত ভাত খেলে কি কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়?
উত্তরঃ বেশি পরিমাণে ভাত খেলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়।

শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি পরে আপনি জানতে পেরেছেন রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে করণীয় এবং দুধে কি কোলেস্টেরল আছে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এছাড়াও কোলেস্টেরল লক্ষণ এবং কোলেস্টেরল কমানোর কিছু কার্যকরী উপায়। আশা করি কোলেস্টেরল সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরে উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url