গরুর দুধে কি কোলেস্টেরল আছে - কোন কোন মাছে কোলেস্টেরল আছে
প্রিয় পাঠক, আজকের পোস্টে আমি আপনাকে জানাবো গরুর দুধে কি কোলেস্টেরল আছে? কোন কোন মাছে কোলেস্টেরল আছে? প্রশ্নের সঠিক উত্তর। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
উপরে উল্লেখিত বিষয় ছাড়াও আজকের পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে কোন কোন খাবারে কোলেস্টেরল আছে, কোলেস্টেরল হলে কি কি খাওয়া নিষেধ, ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে? অধিক মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকে কোন খাদ্যে এবং কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে সকল তথ্য।
গরুর দুধে কি কোলেস্টেরল আছে?
গরুর দুধ আমাদের প্রিয় খাবার এরমধ্যে একটি। আমরা অনেকে নিয়মিত গরুর দুধ খেতে পছন্দ করি। কিন্তু যাদের কোলেস্টেরল আছে তারা গরুর দুধ খাওয়া নিয়ে চিন্তিত থাকে। অনেকের প্রশ্ন গরুর দুধে কি কোলেস্টেরল আছে? এই প্রশ্নের উত্তর এই পোস্টে উল্লেখ করেছি। তাহলে জেনে নিন গরুর দুধের কোলেস্টেরল সম্পর্কে। সাধারনত গরুর দুধে স্বাভাবিক মাত্রার কোলেস্টেরল থাকে। তবে গরুর দুধে কোলেস্টেরল তিনটি স্তরে পাওয়া যায় যেমনঃ
- যেসব গরুর দুধে বেশি পরিমাণে চর্বি থাকে তার কোলেস্ট্রলের মাত্রা প্রায় ৮৫ মিলিগ্রাম।
- কম চর্বির গরুর দুধে কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রায় ৫২ মিলিগ্রাম।
- চর্বি নাই বললে চলে এমন গরুর দুধে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম।
এছাড়াও গরুর দুধ একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি যেমন প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, পটাশিয়াম ইত্যাদি রয়েছে।
কোন কোন মাছে কোলেস্টেরল আছে
মাছ আমাদের প্রিয় খাবার। তাই বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল আছে এমন মাছ যদি মনের অজান্তে খেয়েনি তাহলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নিন কোন কোন মাছে কোলেস্টেরল আছে?
বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল যুক্ত মাছ
- রুইঃ ১০০-১৫০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল রুই মাছের থাকতে পারে।
- কাতলাঃ কাতলা মাছের কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৮০ থেকে ১২০ মিলিগ্রাম।
- চিংড়িঃ ১৫০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছে চিংড়ি মাছে।
- ইলিশঃ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম ইলিশ মাছের।
- বোয়ালঃ বোয়াল মাছের কোলেস্ট্রল আছে ৪০ থেকে ৮০ মিলিগ্রাম।
মিডিয়াম কোলেস্টেরল যুক্ত মাছ
- পুটি মাছঃ মাছের কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৩০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম।
- কই মাছঃ ২০ থেকে ৪০ মিলি গ্রাম কোলেস্টেরল থাকে কই মাছে।
- গরমইলশঃ কোলেস্টেরল থাকে ২০ থেকে ৪০ মিলিগ্রাম গরমইলশ মাছে।
- শিং মাছঃ শিং মাছের কোলেস্টেরলের পরিমাণ ২০ থেকে ৪০ মিলিগ্রাম।
- তেলাপিয়াঃ তেলাপিয়া মাছের কোলেস্ট্রল থাকে ৩০ থেকে ৪০ মিলিগ্রাম।
কম কোলেস্টেরল যুক্ত মাছ
- মৃগেলঃ মৃগেল মাসে কোলেস্ট্রল আছে ১০ থেকে ২০ মিলিগ্রাম।
- বাইম মাছঃ ১০ থেকে ২০ মিলি গ্রাম কোলেস্টেরল বাইম মাছে থাকে।
- টেংরাঃ টেংরা মাছের কোলেস্টেরল থাকে ১০ থেকে ২০ মিলিগ্রাম।
নোটঃ উপরে উল্লেখিত মাছের কোলেস্টরেল এর হিসাব করা হয়েছে প্রতি ১০০ গ্রাম মাছের ওজন অনুপাতে।
কোন কোন খাবারে কোলেস্টেরল আছে
আপনার যদি কোলেস্টেরল থাকে তাহলে কোন কোন খাবারে কোলেস্টেরল আছে তা জানা আপনার জন্য আবশ্যক। তাহলে চলুন জেনে নি কোলেস্টেরল আছে কোন কোন খাবারে।
- গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ভেড়ার মাংস, খাসির মাংস, হাঁসের মাংস, ইত্যাদি মাংস কোলেস্টেরল থাকে।
- ডিমে কোলেস্টেরল থাকে তবে রান্নার নির্ভর করে ডিমের কোলেস্টেরলের মাত্রা।
- দুধ জাতীয় খাবার যেমন দুধ, মাখন, ঘি, পনির ইত্যাদি দুধের তৈরি খাবারে কোলেস্টেরল থাকে।
- চিংড়ি মাছ, মাছের মাথা, কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে।
- বার্গার, পিজ্জা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কেক, চিপস, ডোনাট ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত খাবারে কোলেস্টেরল হতে পারে। তেল জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকতে পারে।
কোলেস্টেরল হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগে ঝুঁকি বেড়ে যায়। সুতরাং কোন খাবার খাওয়ার পূর্বে আগে জানতে হবে ওই খাবারে কোলেস্টেরল আছে কিনা। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কোলেস্টেরল হলে কি কি খাওয়া নিষেধ আছে তা মেনে চললে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে কি খাওয়ানো উচিত
- লাল মাংস যেমন গরুর গোস্ত, ছাগলের গোশতের ইত্যাদি খাবার খাওয়া নিষেধ কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে।
- চর্বি জাতীয় খাবার বা ফ্যাট জাতীয় খাবার যেমন মাখন, পনির ইত্যাদি খাবার খাওয়া নিষেধ।
- নারকেল তেল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া নিষেধ।
- তেল জাতীয় খাবার কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে খাওয়া নিষেধ।
- ডিমের কুসুম, গরু লিভার, কিডনি কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে খাওয়া যাবে না
- মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
- নেশা জাতীয় খাবার কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে খাওয়া যাবেনা।
ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে?
ইলিশ মাছের কোলেস্টেরল থাকলেও অন্যান্য মাছের তুলনায় মাত্রায় কম থাকে। ইলিশ মাছের কোলেস্ট্রল নির্ভর করে মাছের সাইজ অনুযায়ী এবং মাছের বয়স এর উপর। ইলিশ মাছের ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এইচডিএল কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।
ইলিশ মাছের কোলেস্টেরল এর মাত্রার পরিমাণ
- ৬০ থেকে ৭০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে।
- ছোট ইলিশ মাছ এর থেকে বড় ইলিশ মাছে কোলেস্টেরল তুলনামূলক বেশি হয়।
- নদীর ইলিশ মাছের থেকে সমুদ্র ইলিশ মাছে কোলেস্টেরল বেশি থাকে।
কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির উপায়
কোলেস্টেরল থেকে মুক্তির জন্য কিছু খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা মান পরিবর্তন করলে সহজে কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দুধ জাতীয় খাবার খাবার, লাল মাংস, তেল জাতীয় খাবার না খাওয়া ভালো।
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- সাদা ভাত, সাদা রুটি, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম করে খান।
- ফাইবার যুক্ত খাবার যেমন ফলমূল, সবজি বেশি করে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- খাবারে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন।
- নেশা জাতীয় দ্রব্য ধূমপান, মধ্য পান পরিহার করুন।
- অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
- মাঝে মাঝে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করুন।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সমস্যা বেশি হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনি আজকের এই পোস্টে গরুর দুধে কি কোলেস্টেরল আছে ও কোন কোন মাছে কোলেস্টেরল আছে? বিষয় সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে পেরেছেন। উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url