দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঘরোয়া উপায় বিস্তারিত জানুন

বর্তমানে মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গি হচ্ছে পেটের গ্যাসের সমস্যা। দ্রুত পেটের গ্যাস কমাতে কি কি উপায় অবলম্বন করতে হয় তা নিয়ে অনেকে চিন্তিত। ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে দ্রুত পেটের গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এই চিন্তা করতে করতে আমাদের ঘামিয়ে তুলে।

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঘরোয়া উপায়

আমি আপনাকে এই আর্টকেলটি দিয়ে জানাতে চলেছি কিভাবে আপনি দ্রুত পেটের গ্যাস কমাবেন। আপনি কিভাবে আপনার পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।

পেটের গ্যাস কি?

পেটের গ্যাস মানবজীবনের একটি পরিচিত পীড়া। বেশির ভাগ মানুষ এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। পেটের গ্যাসের সমস্যা মূলত একটি সাধারণ সাস্থ্য সমস্যা। আমাদের দৈনন্দিন চলাচল করা ভুলের কারনে অনেক সমস্যা ও অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়।

পেটে গ্যাস হওয়ার কারন কি?

বর্তমানে গ্যাসের সমস্যা নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এটি একটি পাকস্থলী জনিত সমস্যা হওয়ায় পেটের চারপাশে অবস্থান করে। সাধারণত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলাচল, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কারনে পেটে গ্যাস হয়ে থাকে।


পেটে গ্যাস হওয়ার কিছু মূল কারণ আছে তা নিম্নে দেওয়া হলঃ

কিছু ফল জাতীয় খাবারের কারনঃ আপেল, নাশপাতি, আঙ্গুর কাঁচা কলা ইত্যাদি খাবারের কারনে পেটে গ্যাস হয়ে থাকে।

দুগ্ধজাতীয় খাবার খেলেঃ দুধ, দই, পনির ইত্যাদি খাবার পেটে গ্যাসের কারন হয়ে দাঁড়ায়। 

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের খাবার গ্রহনঃ যেমন-ফুটপাতে বসে থাকা দোকান থেকে যেকোনো খাবার খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

অনিয়মে ভাজা-পোড়া জাতীয় খাবার খেলেঃ ভাজাপোড়া হচ্ছে জিব্যার স্বাধ। ফুটপাতের দোকানের ভাজাপোড়া শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

ফাস্টফুড খাওয়ার পরিমান বেশি হলেঃ অনেক ব্যাক্তি আছেন যারা ফাস্টফুড খাওয়া খুব পছন্দ করেন। তাদের পেটের সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।

তৈলাক্ত খাবারের ফলেঃ তৈলাক্ত খাবার পেটের গ্যাস করতে সহায়তা করে। এরা একে অপরের বন্ধু স্বরূপ। 

নিয়মিত ধুমপান করার কারনেঃ ধুমপান যেমন ফুসফুসের ক্ষতির কারন। তেমনি পেটে গ্যাস উৎপাদন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

হজম শক্তি কম হওয়ার কারনেঃ শক্ত খাবার খেলে হজম শক্তি কমে যায়। ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়না। তার কারনে পেটে গ্যাস জমা হতে থাকে।

অতিরিক্ত মসলা ও জালযুক্ত খাবার খেলেঃ মসলা ও জালযুক্ত খাবার পেটে গ্যাসের মূল কারণ। 

পানি কম পরিমানে খাওয়াঃ দৈনিক প্রচুর পরিমানে পানি পান করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পানি পান না করলে গ্যাসের সমস্যায় পড়তে হয়।

পেটে গ্যাস হলে কি কি লক্ষন দেখা যায়?

পেটের গ্যাস কি ইতোমধ্যে আপনারা জানতে পেড়েছেন। পেটের গ্যাসের নাম শুনেনি এমন মানুষ খুব কম আ়ছেন। পেটের ভিতর যখন গ্যাসের চাপ সৃষ্টি হয় তখন কিছু লক্ষন দেখা যায়। লক্ষন গুলো হলো

অতিরিক্ত বায়ু ত্যাগঃ বায়ু ত্যাগের ফলে পেট ফুলে থাকে এবং অস্বস্তি অনুভব হয়। অনেক সময় লজ্জায় পড়তে হয়। 

মুখ দিয়ে গ্যাস বাহির হয়ঃ মুখ দিয়ে গ্যাসের ঢেক উঠা, ডাকা ও পেটে ফুলার ভাব হওয়া

পেটে ব্যথা অনুভবঃ অনেক সময় পেটে অতিরিক্ত যন্ত্রণা হয়। খিচুনি ও ধনুকের মত ব্যথা অনুভব।

বুকে জ্বালা করাঃ বুকে জ্বালা করলে পুড়ে যাওয়ার মত অবস্থা সৃষ্টি হয়।

বমি বমি ও মাথা ব্যথাঃ অনেক ব্যাক্তি বমি করে আবার কারো কারো মাথা ব্যথা করে থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়মিত মলত্যাগ না হওয়া। মলত্যাগে কষ্ট হওয়া ইত্যাদি। 

দ্রুত পেটের গ্যাস কমানোর ঘরোয়া উপায়

পেটের গ্যাসের সমস্যার সমাধান পেতে ঘরোয়া উপায় এর গুরুত্ব অপরিসীম।

খাবারে পরিবর্তনঃ যেসব খাবার খেলে হজমে সমস্যা হয়, গ্যাসের সৃষ্টি করে সেব খাবার পরিহার করুন। যেমন ডাল জাতীয় খাবার, তেল জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড আপেল, আঙ্গুর ইত্যাদি। 

শাক-সবজিঃ কিছু শাক-সবজি আছে যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। যেমন ফুলকপি  বাঁধাকপি, মটরশুটি ও পেয়াজ ইত্যাদি খাবার এরিয়ে চলুন

চিবিয়ে চিবিয়ে সময় নিয়ে খাবার খাওয়াঃ সময় নিয়ে চিবিয়ে খাবার খেলে হজম শক্তি বাড়ে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। এবং পেটে গ্যাস ও জমা হয়না।

খাবারে কলা রাখুনঃ প্রতিদিন নিয়মিত কলা খাওয়ার চেষ্টা করুন। কলাতে থাকা ফ্লেভনয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান পেটে থাকা গ্যাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে

পরিমান মত পানি পান করাঃ প্রতিদিন পরিমান মত পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন দুর করে। খাবারের ৩০ মিনিট পূর্বে এবং খাবারের ৩০ মিনিট পরে পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

কুসুম গরম পানির ব্যবহারঃ কুসুম গরম পানিতে গোসল করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। গরম পানি পেটের পেশি শিথিল করে এবং পেটের গ্যাস দূর করতে সহায়তা করে

নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করাঃ নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করলে পেটের গ্যাস দূর হয়। খাবার শেষে শুয়ে পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন। 

নিয়মিত আদা লবন খানঃ আদা লবন নিয়মিত চিবিয়ে খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।

পেটের গ্যাস দূর করতে ব্যায়ামের ভুমিকা

পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করতে ব্যায়ামের ভুমিকা অপরিসীম। নিয়মিত পেটের ব্যায়াম করলে পেটের গ্যাস দূর করা সহজ হয়।

পেটের ম্যাসাজঃ খাঁটি সরিষার তেল হাতে নিয়ে পেটের উপর হালকা চাপ দিয়ে বুক থেকে পেটের নিচ পর্যন্ত ম্যাসাজ করতে থাকেন এই রকম কিছু সময় করতে থাকেন। তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

নিয়মিত হাঁটা ও যোগ ব্যায়াম করাঃ নিয়মিত যোগ ব্যায়াম গ্যাসের সমস্যা দূর করতে এবং শরীর হালকা করে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের উপকার পাওয়া যায়। রাতে খাবারের পরে একটু হাঁটলে দ্রুত গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। 

পেটের গ্যাস কমানোর খাবারের তালিকা

পেটে গ্যাস এমন রোগীর পরিমান দিন দিন বেড়েই চলেছে। এমন কিছু খাবার আছে যা দ্রুত পেটের গ্যাস কমাতে সহায়তা করে। নিম্নের খাবার গুলো নিয়মিত খেলে পেট ঠান্ডা ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শশা, পেঁপে, কলা, কমলা, দই, দুধ, জিরা, পুদিনা পাতার রস, ডাবের পানি, সরিষা ইত্যাদি। খাবার খেলে দ্রুত পেটের গ্যাস দূর করে।

পেটের গ্যাস কমাতে সকালের কার্যক্রম

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারী। সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে প্রতিদিন    কমপক্ষে ৫০০ গ্রাম পানি পান পান করুন। ফজরের নামাজ কায়েম করে একটু ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। নিয়মিত ব্যায়াম পেটের গ্যাসের সমস্যা সহ নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি দিবে।

অতিরিক্ত পেটে গ্যাস হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত

যারা অতিরিক্ত পেটের গ্যাসে ভুগছেন তারা সবসময় চিন্তিত থাকেন। কি করলে বা কি খেলে এই পেটের অসুখ থেকে মুক্তি পাবো। আবার অনেকে আশে পাশের লোকজনের কাছে বিভিন্ন ঔষধের নাম নিয়ে ফার্মেসি থেকে ঔষধ নিয়ে খাই। তা খেয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। এসব কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। আর সমস্যা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ঔষধ সেবন করুন। তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন ইনশাআল্লাহ

গ্যাসের ঔষধের নামের তালিকা ও দাম

দেশে অগনিত ঔষধ কোম্পানির রয়েছে। হাজার হাজার নামের পেটের গ্যাস দূর করার ঔষধ সরবরাহ করে। তাদের মধ্যে জনপ্রিয় ঔষধের নাম ও দাম নিচে দেওয়া হলো
  • সেকলো ২০ (০৬ টাকা পিস)
  • ইসোটিড ২০ (০৫ টাকা পিচ)
  • রাবিপ্রাজল ২০(০৫ টাকা পিচ)
  • ফিনিক্স ২০(০৭ টাকা পিচ)
  • ম্যাক্সপ্রো ২০(০৭ টাকা পিচ)
  • সারজেল ২০(০৭ টাকা পিচ) ইত্যাদি

গ্যাসের ঔষধ সেবনে সর্তকতা

অনেকে অতিরিক্ত পেটের গ্যাস দ্রুত কমানোর জন্য হাই পাওয়ারের ঔষধ সেবন করে থাকে। সেটা শরীরের ভিতর পার্শ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাই গ্যাসের ঔষধ সেবনে সর্তকতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। বেশি সমস্যা করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url