গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা ও নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
সম্মানিত পাঠক, নিশ্চয় আপনি গর্ভবতী মাকে নিয়ে চিন্তিত! গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা এবং গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গর্ভকালীন সময় গর্ভবতী মায়ের যদি পুষ্টিকর খাবার বা নিয়মিত খাবার না খায় তাহলে বাচ্চা ও মায়ের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভকালীন সময় মায়ের সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরী। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা কি কি খাবার খেতে পারবে এবং কি কি খাবার খেতে পারবে না তার উপর খেয়াল রাখা খুবই জরুরী।
সুতরাং আর দেরি না করে চলুন জেনেনি গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা সহ পুষ্টিকর খাবার তালিকা, ফল খাওয়ার সঠিক সময় এবং গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা।
ভূমিকা
গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাবধানতার সহিত চলাফেরা না করলে মা ও পেটের বাচ্চার দুইজনেরই সমস্যা হতে পারে। একজন গর্ভবতী মায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ফল জাতীয় খাবার খাওয়া। সময় মত পুষ্টি কর খাবার খাওয়া।
গর্ভবতী অবস্থায় নিষিদ্ধ খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। আর্টিকেলটিতে গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা - গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকা - গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা - গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক সময় এবং গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকা। এসব বিষয়ের উপর বিস্তারিত জানতে পারবেন যা একজন গর্ভবতী মায়ের উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী।
গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকা
প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকা মেনে খাবার খাওয়া এবং গর্ভবতী মায়ের ফল প্রিয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
গর্ভবতী মায়ের সকালের নাস্তা
- দুই থেকে তিন কাপ পরিমাণ ওট মিল খেতে পারেন।
- প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ দুধ খাওয়া প্রয়োজন।
- দৈনিক এক থেকে দুইটি ডিম খাওয়া দরকার।
- প্রতিদিন আপেল, কলা, পেপে খেলে মা ও শিশুর জন্য উপকারী।
- প্রতিদিন বাদাম বা বীজ খেতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের দুপুরের খাবার
- পরিমাণ মতো খান।
- ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত মাছ, মাংস, ডাল খাবেন।
- প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি রাখা দরকার।
- খাবার পরে এক কাপ পরিমাণ দই খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ও ডায়াবেটিস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
গর্ভবতী মায়ের বিকালের নাস্তা
- প্রতিদিন বিকেলে একটি করে ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- অল্প পরিমাণে মুড়ি চানাচুর খেতে পারেন।
- বাদাম ও অন্যান্য বীজ মা ও শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গর্ভবতী মায়ের রাতের খাবার
- পরিমাণ মতো ভাত বা রুটি খান।
- খাবার তালিকায় মাছ মাংস ডিম রাখেন।
- প্রতিদিন শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ভাতের সাথে ডাল খেতে পারেন।
- প্রতিদিন সালাদ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এক গ্লাস দুধ খান।
গর্ভবতী মায়ের সুষম খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের সুষম খাবার যেমন ফলমূল, শাক সবজি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা গর্ভবতী মায়ের এবং শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একজন গর্ভবতী মায়ের সুষম খাবার তালিকা কিরকম হওয়া উচিত তা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
শাকসবজি: সবুজ টাটকা শাকসবজি, কেনে সংরক্ষণকৃত, অথবা সংরক্ষণ করার পূর্বে শুকানো শাকসবজি গর্ভবতী মায়ের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। শাক সবজির সালাদ হিসেবে খাওয়ার জন্য গাঢ় রং এর সবুজ জাতীয় শাকসবজি গর্ভবতী মায়ের জন্য পুষ্টিকর। এমনকি ভাত বা অন্যান্য খাবার খাওয়ার সময় আপনার সামনের প্লেটের প্রায় অর্ধেক থাকা প্রয়োজন সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল।
ফলমূল: টাটকা, হিমায়িত সংরক্ষণ, এবং শুকনো জাতীয় ফলমূল গর্ভবতী মায়ের জন্য ভালো একটি খাবার। টাটকা ও সবুজ জাতীয় ফলমূল গুলো গর্ভবতী মায়ের প্লেটের অর্ধেক এর বেশি থাকা উচিত।
ডেইরি খাবার: ডেইরি জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে হচ্ছে, দুধ, দুধ জাতীয় খাবার, পনির, দধি, টক দই, মিষ্টি দই, ছানা ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের জন্য বেশ উপকারী।
আমিষ জাতীয় খাবার: গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একাধিক ধরনের আমি জাতীয় খাবার যেমন মাংস, মাছ, পোল্ট্রি, সিম, মটরশুটি, বাদাম, বিজ জাতীয় খাবার, ডিম ইত্যাদি রাখতে হবে। আমিষ জাতীয় খাবার গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্নেহ জাতীয় খাবার: স্নেহ জাতীয় খাবার গ্রহণের জন্য প্রাণিজ ফ্যাটি জাতীয় খাবার খাওয়া কমানো উচিত। কিছু নির্ধারিত মাছ, এভোকোডা, বাদাম, অলিভ অয়েল, কেনলা অয়েল ইত্যাদি খাবারগুলোতে স্বাস্থ্যকর এবং তেল যা স্নেহ জাতীয় খাবার হিসেবে গণ্য করা যায়।
শস্য জাতীয় খাবার: গর্ভবতী মায়ের খাবারের সাথে যেসব শস্য দেওয়া উচিত তা হল অর্ধেক হোল গ্রেইন। হোল গ্রেইন খাবার গুলো মূলত প্রক্রিয়াজাত করার প্রয়োজন হয় না এবং শস্যজাতীয় খাবার থেকে এই খাবারগুলো অর্গানিকভাবে পুরোটাই পাওয়া যায়। কিছু শস্য জাতীয় হোল গ্রেইন খাবার হলো ওটস, বার্লি, কুইনোয়া অথবা কাউন চাল, ব্রাউন রাইস, ঢেঁকি ছাটা চাল, গমের আটা, ও লাল আটা ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক সময়
সকল গর্ভবতী মায়ের এবং শিশুর সুস্থ থাকার জন্য গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা মেনে ফল খাওয়া প্রয়োজন। একজন গর্ভবতী মা যদি গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা অনুযায়ী সঠিক সময়ে ফল খায় তাহলে মা ও পেটের দুইজনে সুস্থ সবল থাকবেন। গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা পূর্বে গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক সময় জেনে গর্ভবতী হল জাতীয় খাবার খেতে হবে। তবে মনে রাখবেন খালি পেটে ফল খাওয়া উচিত নয়। তাহলে চলুন জেনে নি গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক সময়।
- সকালের নাস্তায় ফলঃ সকালে হালকা নাস্তার পর ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার শরীরে ভেতর থেকে শক্তি যোগাবে এবং ক্লান্তি দূর করবে।
- দুপুরের খাবারের সাথে ফলঃ দৈনিক ফলের সালাদ দুপুরের খাবারে রাখুন। ফলের সালাদ আপনার রুচি বাড়িয়ে দেবে এবং শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করবে।
- বিকেলে ফল খানঃ প্রতিদিন বিকেলে নাস্তায় ফল জাতীয় খাবার রাখুন। এটি রক্তের গ্লুকোজ মাত্রা কমায়।
- রাতে খাবারের পরে ফলঃ রাতের খাবার শেষে ফল খেলে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা
প্রতিটি গর্ভবতী মা চাই তার পেটের সন্তান সুস্থ থাকুক। গর্ভবতী মায়ের এবং তার সন্তানের সুস্থ থাকার জন্য গর্ভবতী মায়ের ফল তালিকা খেতে হবে। দৈনিক গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা মোতাবেক গর্ভবতী মায়েরা ফল জাতীয় খাবার খায় তাহলে মা ও শিশুকে সুস্বাস্থ্য গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে। একজন গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা হলোঃ
- কলাঃ রক্তচাপ ও পেশি সংকুচিত হয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে কলা ভুমিকা রাখে। নিয়মিত কলা খেলে ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম এর ঘাটতি পূরণ হয়। এছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মেজাজ ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
- আঙ্গুরঃ শরীরে থাকা পটাশিয়াম, ভিটামিন-কে ও ফাইবারের ঘাটতি পুরনে সহায়তা করে।
- পেঁপেঃ পটাশিয়াম, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ এবং ফাইবারের জোগান দেই পেঁপে।
- আমঃ আমো থাকা ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, ফাইবার ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ যা শরীরে থাকা ঘাটতি সহজেই পূরণ করতে সাহায্য করে।
- আপেলঃ নিয়মিত আপেল খেলে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারের পূরণ করে। আপেল উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্ট্রেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- সাইট্রাস জাতীয় ফলঃ সাইপ্রাস ফলের মধ্যে রয়েছে কমলা, মালটা, লেবু যা ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে। ভিটামিন সি জাতীয় ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
- খেজুরঃ শরীরে পটাশিয়াম আইরন ও ফাইবার তৈরিতে খেজুর অন্যতম। এছাড়াও খেজুর খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়।
- নাশপাতিঃ নাশপাতি ফলে রয়েছে ভিটামিন-কে, ভিটামিন-সি পটাশিয়াম এবং ফাইবার।
গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকা
প্রতিটি মায়ের গর্ভাবস্থায় শারীর সুস্থতা এবং শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই জরুরী। একজন গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকা হচ্ছেঃ
গর্ভাবস্থায় ফল ও শাকসবজি
- গারো সবুজ রঙের শাকসবজি যেমন লাউ শাক, পুঁইশাক, পালং শাক, শিম, বকলি, পাতাকপি ইত্যাদি খাওয়া প্রয়োজন।
- বেদানা, নারকেল, লিচু, তরমুজ, কাঁঠাল, ইত্যাদি খাওয়া ভালো।
- আম, আনারস, কলা, পেঁপে, জাম্বুরা ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- আঙ্গুর, স্ট্রবেরি, আপেল, জাম্বুরা ইত্যাদি খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন
- বোয়াল, কাতলা, তেলাপিয়া, রুই, চিংড়ি ইত্যাদি জাতীয় মাছ খাওয়া ভালো।
- দেশি মুরগির গোস, ছাগলের গোস, গরুর গোস ইত্যাদি খেতে পারেন।
- নিয়মিত দুধ ডিম খেলে শরীরে পুষ্টি যোগায়।
- দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনা বাদাম, কাজুবাদাম, বীজ, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস।
গর্ভবতী মায়ের খনিজ ও ভিটামিনের খাবার তালিকা
সকল গর্ভবতী মায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান ও ভিটামিন এর খাদ্য তালিকা হলো:
- আয়রন
- ক্যালসিয়াম
- কোলিন
- আয়োডিন
- ফলিক এসিড
- ভিটামিন-এ
- ভিটামিন-সি
- ভিটামিন-ডি
- ভিটামিন-বি৬
- ভিটামিন-বি১২ ইত্যাদি।
আয়রন: গর্ভবতী মায়ের দৈনিক ২৭ মি.গ্রাম আয়রন খাওয়া উচিত। আয়রন গর্ভবতী মায়ের লোহিত রক্ত কনিকা বৃদ্ধি করে যা, মায়ের গর্ভের সন্তানকে সঠিক ভাবে অক্সিজেন সরবারাহ করতে সহায়তা করে। সাধারনত আয়রন পাওয়া যায় মটরশুটি, শীম, পোল্টি, লাল মাংসে, চর্বি বিহীন মাংস ইত্যাদি খাবারে।
ক্যালসিয়াম: গর্ভবতী মায়ের পেটের সন্তানের হাড়ের ও দাঁতের গঠনে এবং শক্ত ও মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম এর অন্যতম উৎস হচ্ছে দুধ, ডিম, দুই, পনির, দুদ্ধ জাতীয় খাবার, গারো সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি, ইত্যাদি।
কোলিন: গর্ভবতী মায়ের ভ্রুণের মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ড বিকাশিত করার জন্য প্রয়োজন কলিং নামক পুষ্টি উপাদানের। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিটি গর্ভবতী মায়ের ৪৫০ মিলিগ্রাম কলিন খাওয়া উচিত। কোলিনের উৎস হচ্ছে দুধ, ডিম, বাদাম, সয়া জাতীয় খাবার ও দুধ জাতীয় খাবার অন্যতম।
আয়োডিন: গর্ভে থাকা ইন্টারনেট মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন দৈনিক ২০০ মাইক্রো গ্রাম আয়োডিন। পাওয়া যায় এমন খাবার হল ডেইরি জাতীয় খাবার, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
ফলিক এসিড: গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকের জন্য প্রায় ৬০০ মাইক্রগ্রাম ফলিক এসিড খেতে হবে। এটি ভিটামিন বি সরবরাহ করে যা শিশুর মস্তিষ্ক দ্রুত বিকাশের জন্য খুবই কার্যকর। গাঢ় সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি, কমলালেবু, বাদাম, শিম, বরবটি ইত্যাদিতে ফলিক এসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে।
ভিটামিন-এ: গর্ভবতী মায়ের দৈনিক ৭৭০ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন এ খেতে হবে। ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গুলো গর্ভবতী মা ও শিশুর হাড়ের সঠিক বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ, দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি, ও ত্বকের বিকাশিত হওয়ার জন্য ভূমিকা রাখে। মিষ্টি আলু, গাজর, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
ভিটামিন-সি: গর্ভাবস্থায় মায়ের প্রতিদিন ৮৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের ভিটামিন সি খাওয়ালে গর্ভের শিশুর দাঁত, মাড়ি ও হার বিকশিত হয়। ভিটামিন সি এর প্রধান উৎসগুলো হচ্ছে লেবু, কমলা, জাম্বুরা, সাইট্রাস জাতীয় ফল, স্ট্রবেরি, টমেটো, ব্রোকলি ইত্যাদি।
ভিটামিন-ডি: গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজন দৈনিক ৬০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি। ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার শিশুর হাড় গঠন, দাঁতের গঠন, দৃষ্টি শক্তি ও ত্বকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার হল যুদ্ধ জাতীয় খাবার স্যামন, সার্ডিন সামুদ্রিক মাছ, চর্বিযুক্ত মাছ, ফোরটিফাইড মিল্ক ইত্যাদি। এছাড়াও ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো।
ভিটামিন-বি৬: গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খেতে হবে প্রায় ১.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬। ভিটামিন বি৬ শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সহায়তা করে। ভিটামিন বি ৬ পাওয়া যায় গরুর মাংস, কলা, ইত্যাদি খাবারে।
ভিটামিন-বি১২: গর্ভবতী মায়েদের দৈনিক খাওয়া উচিত ২.৬ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন বি১২। এই ভিটামিন টি গর্ভের শিশুর দ্রুত স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ এবং রক্তকণিকা তৈরি করতে ভূমিকা রাখে।ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায় মাছ-মাংস, পোল্টি, দুধ ইত্যাদি খাবারে।
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কিছু গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা আছে যেগুলো এড়িয়ে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা মধ্যে যে সব খাবার রয়েছেঃ
- মার্কিন, হেরিং কিং, মেকারেল, টাইলফিস, সুইফিশ ইত্যাদি জাতীয় মাছ এড়িয়ে চলুন। দীর্ঘদিন ফ্রিজিং করা হয় এমন মাছ খাবেন না।
- অস্বাস্থ্যকর গোস দীর্ঘ সময় ধরে ফ্রিজিং করা হয় যেমন বাইরে খোলামেলা পরিবেশে রান্না হয় এমন গোস এড়িয়ে চলুন।
- পেষ্টুরাইজ বা ভালোভাবে ফুটানো হয় নাই এমন দুধ বা দুধের তৈরি সকল খাবার খাওয়ার সম্পূর্ণ নিষেধ।
- মাত্রার বেশি ক্যাফে ইন খেলে কম ওজনের শিশুর জন্মগ্রহণের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অ্যালকোহল জাতীয় খাবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ অ্যালকোহল শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ।
- খুব বেশি পরিমাণে মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত লবণ খাওয়া যাবে না।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে কি খাওয়ানো উচিত
গর্ভবতী মায়ের যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়
গর্ভবতী মায়েদের জন্য এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা থেকে গর্ভধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। নিম্নে গর্ভবতী মায়ের যেসব খাওয়া উচিত নয় তা নিচে দেওয়া হল:
গর্ভবতী মায়ের যেকোন মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ। কারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবারের বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকতে পারে।
কাঁচা মাছ আর সি ফুড এক খাবার গুলোতে উচ্চমাত্রাযর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী উদ্ভিদ থাকে। এগুলো গর্ভবতী মায়েরা খেলে মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
কাঁচা দুধ, ভালো ভাবে ফুটানো হয় নাই, বাসি এ ধরনের খাবার গুলোকে লিসটেরিয়া নামের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে যা লিস্টটেরিওসিস নামের রোগের কারণ হতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের উচ্চমাত্রার পারদ যুক্ত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ। হাঙ্গর, সোর্ড ফিস, মারলিন, কিং মেক কেরেল, মার্কারি ইত্যাদি মাছে উচ্চমাথা পারদ থাকে যা গর্ভবতী মায়ের ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর এমনকি নিষিদ্ধ খাবার।
আধা সিদ্ধ, কাঁচা ও এমনকি পুরোপুরি রান্না না হওয়া খাবার যেমন মাছ, মাংস সবজি ইত্যাদিতে টোকসোপ্ল্যাজমা গনডি, সালমনিয়া, লিস্টএরিয়া ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী থাকে যা গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য, অঙ্কুরিত শস্য কণা, বীজ, খাদ্যশস্য, সিম, কাঁচা মুলা, আলফালসার বীজ, রেডি টু ইট সালাদ ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এই খাবারগুলো খেলে লিস্ট এরিয়া, সালমোনিলা, কি কলি ইত্যাদি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে যার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
কম সিদ্ধ ডিম ও কাঁচা ডিমে থাকে সালমোনিলা ব্যাকটেরিয়া যা গর্ভবতী মায়ের ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ খাদ্য তালিকা।
গর্ভবতী সময়ে গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত ক্যাফেইন যুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। এ ধরনের খাবার গুলো বেশি পরিমাণে খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ক্যাফেইন যুক্ত খাবার হল চা কফি ইত্যাদি।
যকৃত বা লিভারের মাংসতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি খাওয়া নিষিদ্ধ খাবার তালিকা। এই মাংসগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় বিভিন্ন ক্ষতিকর বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য।
গর্ভবতী মায়ের নিরাপদ খাবার প্রস্তুত পদ্ধতি
গর্ভবতী মায়ের নিরাপদ খাবার প্রস্তুত করার জন্য কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি এবং সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়ের নিরাপদ খাওয়ার প্রস্তুত করার পদ্ধতি হলো:
- খাবার প্রস্তুত করার পূর্বে ভালোভাবে সাবান অথবা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিন।
- খাবার খাওয়ার পূর্বে হাত ধুয়ে নিন।
- খাবারের পর ব্যবহারিত থালা-বাসন গ্লাস ও অন্যান্য পাত্র ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখুন।
- রান্না করার জন্য প্রয়োজনীয় শাকসবজি ও অন্যান্য খাবার ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ফলমূল ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
- খাওয়ার জন্য মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ করতে হবে এবং অন্যান্য খাবার ভালোভাবে রান্না করুন।
- যথাযথ ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় খাবার সংরক্ষণ করুন।
- রান্না করা হলে দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি খাওয়া উচিত।
গর্ভবতী মায়ের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা পোস্টে গর্ভবতী মায়ের গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলোঃ
- বেশি বেশি পানি খান
- নিয়মিত হাঁটাচলা করুন
- চিনি যুক্ত খাবার ফাস্টফুড খাবেন না
- কম পরিমাণে ক্যাফেইন খান
- সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শ নিন
শেষ অংশ
সম্মানিত পাঠকগণ, এই পোস্টে আপনাদের জানানো হয়েছে গর্ভবতী মায়ের ফল খাবার তালিকা এবং নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সহ একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকা কি কি খাবার রাখার প্রয়োজন তা নিয়ে বলা হয়েছে। আরো জানানো হয়েছে গর্ভাবস্থায় ফল খাওয়ার সঠিক সময় এবং গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সম্মানিত পাঠক গণ আপনি যদি আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়েন তাহলে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url