অতিরিক্ত গরমে করণীয় কি কি - শরীরের গরম কমানোর উপায়
হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে পরিনত হয় তাপদাহে। তাপদাহ মোকাবিলা করতে অতিরিক্ত গরমে করণীয় কি কি এবং শরীরের গরম কিভাবে কমানো যায় জানতে বিস্তারিত পড়ুন।
রাজধানী সহ দেশের প্রতিটা জেলায় তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে প্রায় ৩৮-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে বিপর্যয়ে পরে সাধারন মানুষের জীবনযাপন এবং পড়তে হয় নানা রকম সমস্যায়। তাপদাহে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। এমন গরমে মানবজীবনে হিটস্টক সহ নানা ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে বয়স্ক এবং শিশুরা বেশি ঝুকিতে থাকে।
বেশি বেশি তরল কোমল পানি পান করে
পানির অপর নাম জীবন। অতিরিক্ত গরমে বেশি বেশি নরমাল পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মাঝে মাঝে স্যালাইন পানিও পান করবেন। এতে শরীরের ভিতর থেকে তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। পানির ঘাটতি পূরন করতে সহায়তা করবে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করবে। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃ্দ্ধি করবে।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি হয়
নিয়মিত শরবত খাওয়া
তাপদাহের ফলে শরীরের ঘামের সাথে খনিজ লবন বাহির হয়। ফলে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। পানি শূন্যতা পূরন করতে নিয়মিত লবন পানি খেতে পানি খেতে পারেন। নিয়মিত লেবুর শরবত খেলে শরীরের পানির ঘাটতি এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। অথবা বিভিন্ন ফলের শরবত যেমন ডাবের পানি,তরমুজ,বেল ইত্যাদি এই অতিরিক্ত গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
খাবারের পরিবর্তন
বর্তমানে অতিরিক্ত গরম থাকার কারনে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। তাই তাপমাত্রা কমানোর জন্য আমাদের দৈনিক খাবারের তালিকায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাবারের তালিকা থেকে মাছ, মাংস বাদ দিয়ে ঠান্ডা জাতীয় সবজি যেমনঃ লাউ,কুমড়া,শশা ইত্যাদি খাবার যুক্ত করতে পারেন। তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে পারেন এর সাথে সোডা, চিনিযুক্ত খাবার পানি, অ্যালকোহল জাতীয় খাবার ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
ঠান্ডা পানির ব্যাবহার
বেশি বেশি ঠান্ডা পানি ব্যাবহার করা শরীরের জন্য হুমকি স্বরূপ। অনেক ব্যাক্তি আছে যারা না পারে ঠান্ডা না পারে গরম সহ্য করতে। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি ব্যাবহার না করে পরিমান মত ব্যাবহার করায় শ্রেয়। গোসলের সময় হালকা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে পারেন। মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানিতে পা ডুবিযে রাখতে পারেন এতে শরির ঠান্ডা করতে সাহায্য করবে। কিছু সময় পরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত মুখমণ্ডল ধৌত করলে অনেক ভালো ফলাফল মিলে।
পোশাক পরিধানে
অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে টাইট ফিটিং পোশাক না পরে ঢিলেঢালা,পাতলা সুতি,ওজনে হালকা এবং হালকা রং(সাদা) পোশাক পরিধান করার অভ্যাস করুন। আপনি হয়তো কখনো পর্যবেক্ষন করেছেন যে যখন কোনো ক্রিকেট টিমের টেস্ট ম্যাচ খেলা হয় তখন সাদা রং এর জার্সি ব্যাবহার করে। কারন টেস্ট ম্যাচ দীর্ঘ সময় চলার কারনে ক্রিকেটারদের যেন রোদের তাপমাত্রা কম লাগে সেইজন্য সাদা জার্সির ব্যাবহার করে থাকে।
অতিরিক্ত রোদ এরিয়ে চলা
গরমের অতিরিক্ত রোদ যেমন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যখন রাস্তায় চলাচল করি তখন তাপদাহের লেলিহান শিখা গায়ে লাগলে মনে যেন শরীর পুরে যাচ্ছে। প্রবল তাপমাত্রা সহ্য করতে না পারায় অনেক সময় মানবজীবনে নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়তে হয়। ফলে মানব জীবন মৃত্যুর দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়। অনকে লোকজন আছে যাদের বিপদজনক তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হয়। তাদের অতিরিক্ত গরমে করণীয় গুলো মেনে সাবধানতা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সকাল ১০ ঘটিকা - বিকাল ০৪ ঘটিকা অবদি রোদের তাপমাত্রা বেশি থাকায় এই সময়টা বেশি ঝুকিপূর্ণ। তাই অতিরিক্ত রোদে অযথা বাহিরে ঘোরাঘুরি না করে ঘরে থাকায় উত্তম। যদি বাহির হওয়া লাগে তাহলে পানি, ছাতা, ক্যাপ সাথে রাখুন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সাথে যদি নরম তোয়ালে ভিজিয়ে রাখতে পারেন তাহলে অনেক ভালো কাজ দিবে ইনশাআল্লাহ।
আরো পড়ুনঃ যে খাবারগুলো আপনার পেটের মেদ বৃদ্ধি করবে
নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়াম করা
শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমাতে নিয়মিত শ্বাসের ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজের পরে ব্যয়াম শুরু করতে পারেন। নির্ধারিত ফাকা জায়গা সবুজে ঘেরা পরিবেশ নির্ধারন করুন। সবচেয়ে ভালো হয় গ্রামের মনোরম পরিবেশ আর সবুজে ঘেরা আঁকাবাঁকা নদীর তীরে। বসে নাক দিয়ে নিশ্বাস নিয়ে কিছু সময় ধরে রাখতে হবে। তারপর মুখ দিয়ে ছাড়তে হবে। এভাবে প্রতিদিন ৮-১০ মিনিট করতে হবে। এতে মস্তিষ্ক ঠান্ডা করতে সাহায্য করবে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
ভাড়ী ব্যায়াম না করা
যখন দেশের রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলায় তাপদাহ চলে তখন মানুষের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর তুলনায় বেশি থাকে। ফলে অতিরিক্ত গরম অনুভব করে এবং যারা এই শরীরের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারেনা তাদের মাঝে অস্থিরতা কাজ করে। এমন গরমে যদি কোন ব্যাক্তি কঠিন ব্যায়াম করে তাহলে তার শরীরের পেশির কার্যকলাপ বেড়ে যায়। ফলে খুব দ্রুত শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং বিপদজনক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই গরমের দিনে কঠিন বা ভাড়ি ব্যায়াম না করায় শ্রেয়।
শরীরের গুরুত্বপূর্ন জায়গায় ঠান্ডা পানি লাগানো
শরীরের কিছু কিছু মূল পয়েন্টে মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি লাগালে শরীর ঠান্ডা রাখে। মূল পয়েন্ট বলতে যেমনঃ হাতের কব্জি, পায়ের তালু, হাঁটু,মুখমণ্ডল, এবং ঘাড় ইত্যাদি স্থানে ঠান্ডা পানি দিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়াও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিয়মিত নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাহলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে যদি পাঁচবার ওজু করা যায় তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। নিয়মিত ওজু করলে শরীর ঠান্ডা থাকবে ইনশাআল্লাহ।
আরো পড়ুনঃ ঘুম না আসার কারণ - রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম
আবহাওয়া সম্পর্কে আপডেট থাকা
অতিরিক্ত গরম যেমন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে তেমনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই প্রতিদিনের আবহাওয়া সম্পর্কে যদি জানা থাকলে তাহলে আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে যেকোনো কাজে এবং রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে প্রস্তুতি নিতে পারা যাবে।
তীব্র তাপদাহে সবচেয়ে বেশি ঝুকিতে থাকে বয়স্ক এবং শিশুরা। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় তাদরে ঘরের বাহিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখা খুবই জরুরি।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url