বাচ্চাদের জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়-২০২৪ বিস্তারিত জানুন
আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ছোট বাচ্চাদের শরীরের তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। বাচ্চার শরীরের ভিতরে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার অনুপ্রবেশের কারনে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয়ে জ্বরে আক্রান্ত হয়।
আদরের সন্তানের এই পরিস্থিতি দেখে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না। বাচ্চাদের এই পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে কি কি করতে হয় এবং ঘরোয়া উপায়ে বাচ্চাদের জ্বর কমানোর উপায় জানতে বিস্তারিত পড়ুন।
ভাইরাস জ্বর কি কেন হয়?
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের আক্রমণে যে জ্বর হয় তাকেই ভাইরাস বলা হয়। ছোঁয়াচে অসুখের মধ্যে ভাইরাস জ্বর একটি। কোন গ্রামের বা পরিবারের একজনকে ভাইরাস জ্বর হলে আস্তে আস্তে সবার মাঝে ছড়িয়ে যেতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলে বা তার ব্যবহৃত জিনিস-পত্র ব্যবহার করলে ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত ছড়ানোর অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে হাঁচি-কাশি।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে কি খাওয়ানো উচিত
বাচ্চাদের জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
ছোট সোনামণিটা যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে বাবা-মায়ের চিন্তা বেড়ে যায়। বাচ্চা কিভাবে সুস্থ করা যায় এই চিন্তায় ছোটাছুটি করতে থাকে। তখন আপনার যদি কিছু ঘরোয়া উপায় জানা থাকে তাহলে তাৎক্ষণিক সেই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারবেন। তাহলে জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের বাচ্চাদের জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়। নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
ঠান্ডা পানির ব্যবহার
আপনার বাচ্চার যদি জ্বর হয় তাহলে ঠান্ডা পানি নরম সুতি কাপড় ভিজিয়ে কপালে দিবেন যা পানি পটি নামে পরিচিত। জ্বরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
গোসলে কুসুম গরম পানি
আপনার জ্বরের বাচ্চাকে গোসল করানোর সময় কুসুম গরম পানিতে গোসল করালে দ্রুত তাপমাত্রা কমে যায়। জ্বরের বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি।
বেশি বেশি তরল খাওয়ান
ছোট সোনামণিটা কে জ্বর হলে তার শরীরে দ্রুত পানি কমতে থাকে। ফলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এই রকম অবস্থায় আপনার শিশুকে বেশি বেশি পানি, ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের রস, ইত্যাদি খাওয়ান।
পোশাক পরিধানে পরিবর্তন
আপনার আদরের সন্তানকে যদি জ্বর হয় তাহলে তাকে হালকা, সুতি কাপড় এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করান। অতিরিক্ত ফ্যানের বাতাসে রাখবেন না। যদি বাতাস দেওয়া লাগে তাহলে ফ্যানের রেগুলেটর কমিয়ে দিন। যদি আপনার শিশুর শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাহলে হালকা কম্বল ব্যবাহার করুন
মধু ও লেবুর মিশ্রন খাওয়ান
মধু ও লেবুর রসের মিশ্রণ আপনার শিশুর খুব দ্রুত রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিবে। পরিমাণ মত লেবুর রস এবং খাঁটি মধু সাথে আদার গুড়া হাফ চা চামচ ৩ টি একত্রে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। উক্ত মিশ্রণ দিনে ২ বার ১ চা চামচ শিশুকে খাওয়ালে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
তৈল মালিশ করা
খাঁটি সরিষার তেল আর রসুন একত্রে নিয়ে মালিশ করলে শরীরে থাকা জীবাণু সরাতে সাহায্য করে।
- প্রথমে পরিমাণ মত খাঁটি সরিষার তৈল নিয়ে ভালোভাবে তা ফুটিয়ে নিন।
- পরিমান মত কয়েকটি রসুনের কোয়া বা রসুন পেস্ট (পেস্ট হলে ভালো) ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- তারপর কিছু সময়ের জন্য নিদ্রিষ্ট স্থানে রেখে দিন ( স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরে আসা পর্যন্ত)।
- স্বাভাবিক তাপমাত্রা হয়ে গেলে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে বাচ্চার সমস্ত শরীরে ভালোভাবে আলতো করে মালিশ করুন।
- বেশি গুরুত্ব দিবেন বুকের মাঝে, পিঠের মাঝে, ঘাড়ে, কোমড়ে, হাতের তালুতে ও পায়ের তালুতে।
আরো পড়ুনঃ কিভাবে গোপনাঙ্গের চুলকানি দূর করবেন
আদা দিয়ে গোসল
২ চামচ আদার গুড়া কুসুম গরম পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে আপনার বাবুকে গোসল করান। এটি শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু দূর করার গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘরোয়া উপায়।
পেঁয়াজের ব্যবহার
শিশুর ভাইরাস জনিত জ্বরের কারনে হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হওয়া রোধ করতে এবং শরীরের ব্যথা দূর করতে এই ঘরোয়া উপায়টি অন্যতম ভুমিকা পালন করে।
- একট পেঁয়াজ গোল চ্যাপটা করে কেটে ২-৩ টুকরা করুন।
- আপনার শিশুর পায়ের তালুতে এক টুকরো কাটা পেঁয়াজ নিয়ে ২-৩ মিনিট ঘুষতে থাকেন। এইভাবে দৈনিক সর্বোচ্চ দুইটি সময় করবেন।
- প্রথমে পেঁয়াজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
- তারপর পেঁয়াজের জুস করে প্রতিদিন ২ বার পরিমাণ মত ( ১ চা চামচ) খাওয়াবেন।
বাচ্চাকে হাসি-খুশি রাখুন
আপনার শিশু যেন মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে না পড়ে সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। শিশুকে হাসি-খুশির মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। আপনার সন্তানকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে অন্যতম ঘরোয়া উপায়।
বিশ্রাম নিশ্চিত করুন
ছোট বাচ্চা বা বড় মানুষের কথা বলেন যদি কারো জ্বর বা অন্যান্য রোগ হয়ে থাকে তাহলে আস্তে শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। শিশু বা বয়স্ক ব্যাক্তির সবার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দ্রুত সুস্থ হতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
বাচ্চাদের জ্বর ভালো হওয়ার দোয়া এবং জ্বরের কুরআনী চিকিৎসা
বিভিন্ন অসুখ মানুষকে মহান আল্লাহ তলাওয়ালা খুশি হয়ে দিয়ে থাকেন। যদি কোনো মা-বাবার আদরের সন্তানের জ্বর হয় তাহলে অনেক ভেঙ্গে পড়েন। সুতরাং না ভেঙ্গে পড়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যেন তিনি তাড়াতাড়ি জ্বর ভালো করে দেয়। জ্বর ভালো হওয়ার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কুরআনী চিকিৎসা।
বাচ্চাদের জ্বর ভালো হওয়ার দোয়া ও বাংলা উচ্চারণঃ “বিসমিল্লাহির কাবিরী আউজুবিল্লাহিল আজিম। মিন শাররি কুল্লি ইয়রকিন নাওরিন ওয়ামিন শাররি হাররিন নার।”
বাংলা অর্থঃ মহান আল্লাহর নামে দয়াময় মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয়ের জন্য আমি প্রার্থনা করছি, শয়তান দ্বারা প্রভাবিত ও জাহান্নামের উত্তপ্ত আগুনের মন্দ প্রভাব থেকে।
সর্তকতা ও চিকিৎসা
বাচ্চারা যখন অতিরিক্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দূর্বল হয়ে পড়ে তখন মা-বাবার মাথা ঠিক থাকে না। তখন সবাই চিন্তায় ভেঙ্গে পড়ে। ভাবতে থাকে কিভাবে দ্রুত জ্বর কমানো যায়? আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে। এসময় মাথা ঠিক না থাকার কারনে কখন কি করে না করে বুঝতে পারেনা। উল্টো পাল্টা কাজ করে ভুলভাল ওষুধের কারনে মিষ্টি শিশুটার অবস্থা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়। এই পরিস্থিতিতে পড়ার পূর্বে সর্তকতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি। এমন অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা শ্রেয়।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url